‘স্বাস্থ্য বন্ধক’ রেখে মানুষের কল্যাণ হয় না

ধরিত্রীকে বিপর্যস্ত করে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না। এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোস্টার

দুই বছর আগে শুরু হওয়া করোনা মহামারি শেষ হয়নি। করোনায় মৃত্যু কমেছে, সংক্রমণের ব্যাপকতাও হ্রাস পেয়েছে। তবে মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, এমন ঘোষণা কেউ দিচ্ছেন না। এরই মধ্যে গত মাসে দুটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের তথ্য দিয়েছে। একটি প্রতিবেদন বলছে, দুই কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ বিশ্বের যেকোনো শহর বা মহানগরের চেয়ে বেশি। অপর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করে ঢাকার বাসিন্দারা।

মহামারি ও দূষণের মধ্যে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াজনিত রোগের প্রকোপ। ডায়রিয়ায় শুধু যে রাজধানী বা তার আশপাশ এলাকার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এমন নয়। দেশের ৬৪ জেলার সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। এ রকম রোগগ্রস্ত পরিস্থিতির মধ্যে আজ ৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে।

এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল বার্তা হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে মানুষ ভালো থাকবে। তারা এ–ও বলছে, এমন একটি কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে
ডা. মুশতাক হোসেন, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য’ (আওয়ার প্লানেট, আওয়ার হেলথ)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ ও ধরিত্রীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং কল্যাণমুখী সমাজ গঠনের আন্দোলন বেগবান করাই এ বছরের স্বাস্থ্য দিবস পালনের উদ্দেশ্য।

দিবসটি উপলক্ষে তৈরি করা ধারণাপত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় পরিবেশ বিপর্যয়গত কারণে। যেসব কারণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব এককভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। জলবায়ুর সংকট আসলে স্বাস্থ্যসংকট। কিছু রাজনৈতিক, সামাজিক ও বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত জলবায়ু ও স্বাস্থ্যসংকট তৈরি করছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল বার্তা হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে মানুষ ভালো থাকবে। তারা এ–ও বলছে, এমন একটি কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।

বাংলাদেশে বন আর নদী কমছে

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩ লাখ। নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের পরেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্ব বাংলাদেশে। দেশে দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। এ নগরায়ণ হচ্ছে অপরিকল্পিত।

বসতি ও নগরায়ণের চাপ পড়েছে দেশের বনভূমি ও জমির ওপর। দেশের প্রধান বনভূমি সুন্দরবন আয়তনে কমছে। মধুপুর শালবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) পাহাড়ি বন অব্যাহতভাবে উজাড় হচ্ছে। এ দুটি বনাঞ্চলে মানুষের বসতিও বাড়ছে।

অন্যদিকে স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে জমিতে বিপুল পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। সার ও কীটনাশকের অবশেষ যাচ্ছে জলাশয়, খাল–বিল ও নদীতে। বড় বড় শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে মাছ ও জলজ প্রাণীর ওপর। অবৈধভাবে নদী দখল হচ্ছে। সড়ক ও সেতু তৈরি হচ্ছে নদী সংকুচিত করে। দেশের অনেক নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নদীগুলো বিপদের মুখে।

স্বাস্থ্যের ওপর বন, ভূমি ও নদীর প্রভাব নিয়ে দেশে কোনো গবেষণা হয়েছে বলে জানা যায়নি। তবে ২০১৫ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রকফেলার ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট–এর এই গ্রহের স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশন প্রতিবেদনে বন উজাড় ও ভূমির মান নষ্ট হওয়ার কারণে কী সমস্যা দেখা দেয়, তার বর্ণনা আছে। তাতে বলা হয়, বন উজাড় হলে মশার উপদ্রব বাড়ে, ফলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বড় উজাড় হলে বিশুদ্ধ বায়ুর পরিমাণ কমে, তাতে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। একইভাবে বড় বড় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের ফলে আশপাশের জলাশয়ের পানি কমে বা দূষিত হয়, বায়ুর মান কমে। এসব শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেসব দেশের ওপর বেশি পড়ছে, এমন দেশগুলোর তালিকার প্রথম দিকে বাংলাদেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে জোয়ারে এখন বেশি এলাকা প্লাবিত হয়, সমুদ্রের লোনা পানি আগের চেয়ে বেশি ঢুকতে দেখা যাচ্ছে। খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, লোনা পানির ব্যবহার বেশি হওয়ায় এলাকায় উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা বেশি।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের প্যানেল-আইপিসিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৯ থেকে ২১ লাখ মানুষ ঘরবাড়িছাড়া হতে পারে, দেশের কিছু অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ৩১ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পানির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে ১০ শতাংশ মানুষ পানির সংকটের মধ্যে আছে। ২০৫০ সাল নাগাদ তা বেড়ে ২৫ শতাংশ হতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশের উজান থেকে আসা গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে ঝড়–জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ ও তীব্রতা দুটোই বেড়েছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের প্রাণহানি
ঘটে, মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষতি হয়। নদীভাঙনের কারণে দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। আবাসনসংকট, দারিদ্র্য ও নিরাপদ পানির অভাবের কারণে এসব মানুষ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে।

এক স্বাস্থ্যের দৃষ্টিভঙ্গি

জীবজন্তু ও পশুপাখি মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য, চামড়া ও লোম, ভ্রমণ, খেলাধুলা, শিক্ষার নানা ক্ষেত্রে এদের দরকার হয়। জীবজন্তু–পশুপাখি ও তাদের পরিবেশের নিবিড় সংস্পর্শে যায় মানুষ। এর মধ্য দিয়ে তাদের রোগ মানুষে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে এর অনেক উদাহরণ আছে।

বিশেষজ্ঞদের তিন দশকের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বৈশ্বিকভাবে নতুন বা পুরোনো যেসব রোগ নতুন করে আবির্ভূত হচ্ছে, তার ৭৫ শতাংশের উৎস জীবজন্তু বা পশুপাখি। প্রাণী ও পশুপাখির নিবিড় সংস্পর্শে আসার সঙ্গে এসব রোগের সম্পর্ক আছে। মানুষ আক্রান্ত হয়, এমন ১ হাজার ৪৬১টি সংক্রামক রোগ পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস বলছে, এদের প্রায় ৬০ শতাংশের একাধিক বাহক আছে। এরা মানুষ, জীবজন্তু বা পাখির শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। কিছু রোগের জীবাণু পাখি থেকে পশুতে, পশু থেকে মানুষে বা পাখি থেকে মানুষের শরীরে যায়।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে বেশ কিছু নতুন রোগ ও পুরোনো রোগ নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। ১৯৭৭ সালে এ দেশের মানুষ প্রথম ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিস’ রোগে আক্রান্ত হয়। তার আগে এ রোগ দেশে ছিল না। এর বাহক মশা। এইচআইভি/এইডস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, নিপাহ, জিকা—এসব রোগ অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস।

পরিবেশবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মানুষের স্বাস্থ্যে মনোযোগ দিলে, মানুষের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ করলে সুরক্ষা পাওয়া যাবে না। মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতি–পরিবেশ, জীবজন্তু–পশুপাখি সবার স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। সবার জন্য হবে এক স্বাস্থ্য। বৈশ্বিকভাবে ধারণাটি ‘ওয়ান হেলথ’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে।

ওয়ান হেলথ ধারণার মূল কথা হচ্ছে, মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে তার স্বাস্থ্য অটুট রাখতে পারে না, পারবে না। মানুষের স্বাস্থ্য তখনই ভালো
থাকবে, যখন বন্য প্রাণী, গৃহপালিত পশুপাখি, খামারের জীবজন্তু, কৃষিজমি এবং বৃহত্তর প্রতিবেশের স্বাস্থ্য অটুট থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, এক স্বাস্থ্য হচ্ছে বহুপক্ষীয় ও বহু খাতভিত্তিক সহযোগিতামূলক কর্মোদ্যোগ। এটি কার্যকর হবে স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে। মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং তাদের বসবাসের পরিবেশের স্বীকৃতির মাধ্যমে স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করাই এক স্বাস্থ্যের উদ্দেশ্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ জাতিসংঘের কিছু অঙ্গ সংস্থা, ইউএসএআইডির মতো আন্তর্জাতিক একাধিক দাতা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একাধিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এক স্বাস্থ্যের ধারণাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছে প্রায় দুই দশক ধরে।

জনস্বাস্থ্যবিদদের সঙ্গে কথা বলে এক স্বাস্থ্যের ধারণা পাওয়া যায়। তাঁরা বলেছেন, কুকুর জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। কুকুরকে টিকা দিয়ে রোগমুক্ত করা গেলে মানুষ জলাতঙ্ক থেকে দূরে থাকবে। অ্যানথ্রাক্স মানুষে ছড়ায় গরু–ছাগল। গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্সমুক্ত করলে মানুষের ঝুঁকি থাকবে না। পৃথকভাবে না ভেবে মানুষ ও পশুপাখির স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এটাই ওয়ান হেলথ বা এক স্বাস্থ্যের ধারণা।

বৈশ্বিক প্রবণতা ও করণীয়

২০১৫ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রকফেলার ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট–এর এই গ্রহের স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনের সদস্যরা তাঁদের প্রতিবেদনে বলেছেন, উন্নয়নের কথা বলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য বন্ধক রাখা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে তাঁরা তিনটি প্রধান সমস্যার কথা বলেছেন। প্রথমত চিন্তা বা কল্পনার সমস্যা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে মোট দেশজ উৎপাদনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই গুরুত্বের কাছে পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ম্লান হচ্ছে, অসামঞ্জস্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ। এটি স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও দরিদ্র মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ক্ষমতার ব্যর্থতা।

দ্বিতীয় সমস্যা জ্ঞান তথা গবেষণা ও তথ্যের ঘাটতি। ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের জন্য কোন সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলো কাজ করে, তা নিয়ে বৈশ্বিকভাবে গবেষণা কম হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ খাতে গবেষণার জন্য অর্থায়ন কম হয়েছে। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অনিচ্ছা বা অদক্ষতা দেখা গেছে।

তৃতীয় সমস্যাটি বাস্তবায়ন বা সুশাসন নিয়ে। সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যার স্বীকৃতি দিতে ও ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে। এ সমস্যা বিশেষভাবে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ যখন কোনো অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয় অথবা সম্পদ একত্র করার চেষ্টা করে। তাদের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অনেক সময় চলে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের ধারণাপত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কোভিড–১৯ মহামারিবিজ্ঞানের রোগ নিরাময় ক্ষমতার প্রমাণ দেখিয়েছে, একই সঙ্গে এই গ্রহেবিরাজমান অসমতাকে চোখের সামনে এনেছে। এ মহামারি সমাজের সব পর্যায়ের দুর্বলতা উন্মোচন করেছে এবং ন্যায়সংগত স্বাস্থ্যের জন্য টেকসই কল্যাণমুখী সমাজ গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উপার্জন, সম্পদ ও ক্ষমতার বৈষম্য যেমন বাড়াচ্ছে, তেমনি বহু মানুষকে দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে দিয়েছে। এই গ্রহ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ চক্র ভাঙতে প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন। আর প্রয়োজন স্বাস্থ্যে ব্যাপারে ব্যক্তিকে সহায়তা দেওয়া ও উৎসাহিত করা।