রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া নিহত কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবির ওরফে হীরা আজ বুধবার রংপুরের আমলি আদালতে এ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে বিএনপি নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নামও এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ‘বড় ভাই’-এ ঘটনায় জড়িত বলে তিনি জানিয়েছেন। ওই ‘বড় ভাই’ বিএনপির ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুম ওরফে কাইয়ুম কমিশনার বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
গত ৩ অক্টোবর রংপুর শহরের উপকণ্ঠে কাচু আলুটারি গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন কুনিও হোশি। হত্যাকাণ্ডের পরপরই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হুমায়ুনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। হুমায়ুন কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী। যার মাধ্যমে জাপানি নাগরিক কুনিও রংপুরে এসেছিলেন সেই জাপান প্রবাসী জাকারিয়া জামিল ওরফে মিশন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হুমায়ুনকে অনুরোধ করেছিলেন কুনিওকে সহায়তা করার জন্য। হুমায়ুনকে তাঁরা অনেক দিন ধরেই চেনেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, দুই দফায় হুমায়ুনকে ২৫ দিন রিমান্ডে নেওয়ার পরে আজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কর্মকর্তারা জানান, কুনিও হত্যা মামলায় ৫ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলেন হুমায়ুন। এরপর একই মামলায় ১৪ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। ১৯ অক্টোবর আবারও রংপুর শহরের ধাপ এলাকায় গত ১৫ জুলাই র্যাবের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে মানিক ও সুমন দুই ভাই নিহত হওয়ার ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ তাঁকে রিমান্ডে নেয়।
জেলা পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রগুলো জানায়, আজ সন্ধ্যার পরে হুমায়ুনকে কাউনিয়া আমলি আদালতে তোলা হয়। সেখানে তিনি হাকিম শফিউল আলমের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সূত্রগুলো জানায়, জবানবন্দিতে হুমায়ুন তাঁর ভাই কামালের সঙ্গে বিএনপি নেতা হাবিব-উন নবীর যোগাযোগের কথা বলেছেন। তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন ও হুমায়ুন বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন বলে স্বীকার করেছেন।
রাত সাড়ে আটটার দিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুর রাজ্জাক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হুমায়ুন কবীরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়ে তিনি এখনো কিছু জানেন না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর উদ্ধৃত করে এসপিকে জানানো হয় যে, হুমায়ুন তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে এক বিএনপি নেতার যোগাযোগ ছিল। এটুকু বলার পরেই এসপি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। আপনারা যদি জেনে থাকেন সেখানে আমার বলার কিছু নেই।’
কাউনিয়া থানার পুলিশ জানায়, কুনিও হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত হুমায়ুনসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই দুজনের মধ্যে অন্যজন মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান ওরফে বিপ্লবকেও ৫ অক্টোবর ১০ দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়। তবে ১০ অক্টোবর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। রাশেদ-উন-নবী বিএনপি নেতা হাবিব-উন-নবীর ভাই।