১০৬ উপজেলা প্রশাসন চালাচ্ছেন নারীরাই

দেশের ১০৬ জন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মরত ইউএনওদের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া সরকারের জনপ্রশাসনে নারী সচিব আছেন ১০ জন। ৬ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ১৬ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডার ছাড়াও সরকারি চাকরিতে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০০৯ সালে সরকারি চাকরিতে নারী ছিলেন ২ লাখ ২৭ হাজার ১১৪ জন। ২০১৫ সালে ওই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৪। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে সরকারি চাকরিতে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ।

দেশে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা আছেন ৫ হাজার ৭৫৯ জন। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ জনই নারী। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ ও পদায়ন শাখার তথ্য বলছে, প্রশাসনের তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরে নারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ দিনে দিনে বাড়ছে। এতে দেখা যায়, আগে নারী কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক পদগুলোতে থাকতেন। এখন ডিসি ও ইউএনওর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা।

উপজেলায় নারী কর্মকর্তা বেড়েছে

দেশে বর্তমানে উপজেলার সংখ্যা ৪৯১। এখন পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে ৪২৮টি উপজেলায় ইউএনও আছেন, যাঁদের মধ্যে নারী ১০৬ জন।

কোনো কোনো জেলার অধিকাংশ উপজেলাতেই নারীরা ইউএনওর দায়িত্ব পালন করছেন। যেমন কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৮টি এবং টাঙ্গাইলে ১২টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতে ইউএনও পদে এখন নারী। ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলার মধ্যে নারী ইউএনও আছেন ৫টি উপজেলায়।

তৃণমূল প্রশাসনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর এই অগ্রগতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের নারী উন্নয়ন ও অর্জন এখন বিশ্বের কাছে দৃশ্যমান। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ এখনো কম। তাঁর মতে, তৃণমূলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ডিসি ও ইউএনওর পদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এসব পদে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি খুবই ইতিবাচক।

একজন ইউএনও উপজেলা প্রশাসন পরিচালনা ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলায় তাঁরাই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। ফলে প্রচুর কাজের চাপ থাকে তাঁদের ওপর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নারী ইউএনও প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে না।

মাঠপর্যায়ের এই কাজে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় কি না, জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মিতু মরিয়ম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজকর্মে নারী হিসেবে কোনো প্রতিবন্ধকতা বোধ করি না। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের সহযোগিতা বেশি পাই।’

ডিসি ৬, এডিসি ১৬

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে এখন ৬ জেলায় নারীরা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই জেলাগুলোর মধ্যে আছে সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, লক্ষ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর। এ ছাড়া আট বিভাগের মধ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার এখন নারী। তাঁর নাম মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা প্রথম আলোকে বলেন, ডিসিদের কাজের চাপ প্রচুর। সেটা তিনি ভালোভাবেই সামলে নিতে পারেন। নারী হিসেবে আলাদা কোনো চাপ বা সমস্যা হয় না।

গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ২০৬ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ছিলেন। এর মধ্যে ১৬ জন নারী। নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক নারী কর্মকর্তাদের জন্য সাংগঠনিকভাবে কাজ করছে।

১০ সচিব নারী

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২ নভেম্বর পর্যন্ত সচিব ও সমপর্যায়ের ৭৮টি পদের মধ্যে ১০ জন নারী রয়েছেন। অর্থাৎ মোট সচিবের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ নারী। সাম্প্রতিক সময়ে নারী সচিবদের সংখ্যা এটাই বেশি। এসব কর্মকর্তা হলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সুরাইয়া বেগম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব নাছিমা বেগম, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক কানিজ ফাতেমা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মাফরুহা সুলতানা, সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব আখতারী মমতাজ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জোয়েনা আজিজ, শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব আফরোজা খান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব নমিতা হালদার এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামীমা নার্গিস।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকার নারীদের সামনে নিয়ে আসতে কর্মকৌশল প্রণয়ন, বাজেট বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এখন চাকরির ক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়ে আসছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নারী বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রশাসনের গতিও বেড়েছে। হয়তো দেখা যাবে, একটা পর্যায়ে চাকরির ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষ সমান হবে।