১১ লাখের বেশি প্রবাসী এমআর পাসপোর্ট পাননি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পাসপোর্ট
পাসপোর্ট

আর মাত্র চার দিন পরেই হাতে লেখা পাসপোর্টের যুগ শেষ হচ্ছে। আগামী বুধবার ২৫ নভেম্বর থেকে কোনো বিমানবন্দরে হাতে লেখা পাসপোর্ট গ্রহণ করা হবে না। ফলে যাঁদের যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) নেই, তাঁরা চাইলেও দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বিদেশে বসবাসরত ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৭ জনকে এখনো যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) দিতে পারেনি সরকার। আওয়ামী লীগের সাংসদ ইসরাফিল আলমের এ–সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে মোট ৩৫ লাখ বাংলাদেশি আছেন।
তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তর বলছে, এমআরপি পাননি, এমন প্রবাসীর সংখ্যা তিন লাখের বেশি হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ সংখ্যা দুই লাখের বেশি হবে।
জানা গেছে, আইকাও ১৬ বছর আগে বাংলাদেশকে এমআরপি চালু করার নির্দেশ দিলেও পুরোপুরি সে কাজ শেষ হয়নি। এমআরপি ইস্যু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
বাংলাদেশের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বলছে, এখন পর্যন্ত দেশের ভেতরে বিভিন্ন বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পাসপোর্টের ৬৮টি কার্যালয় থেকে এক কোটি এবং বিদেশের ৬০টি দূতাবাস থেকে ২১ লাখ বাংলাদেশি এমআরপি নিয়েছেন। আরও লাখ পাঁচেক লোক এমআরপির জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন। আর যাঁরা এমআরপি করেননি, তাঁরাও আগামী কয়েক মাসে এমআরপি করে নিতে পারবেন। ফলে ২৪ নভেম্বরের পর বাংলাদেশিদের খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পাসপোর্ট) মোস্তফা কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, দুই লাখ লোক এমআরপি আওতার বাইরে থাকবেন। সরকার এমআরপি করার জন্য প্রবাসীদের বারবার সুযোগ দিয়েছে। এখন টেলিভিশনেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি এ সুযোগ না নেন, তাহলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য দায়ী থাকবেন।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাঁচ শ্রেণির প্রবাসীরা তাঁদের হাতে লেখা পাসপোর্ট যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) করাতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এঁদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে বিদেশে গেছেন বা থাকছেন। এর মধ্যে একশ্রেণির লোক অবৈধভাবে অন্যের নামের পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে গেছেন, বয়স হেরফের করে গেছেন। রয়েছেন এমন প্রবাসী, যাঁরা সীমান্ত পার হয়ে এক দেশ থেকে গেছেন, পর্যটন ভিসায় যাঁরা গেছেন এবং যাঁদের হাতে লেখা পাসপোর্টের মেয়াদ ২০১৮ সাল পর্যন্ত। তবে এঁদের কারও কাছে যদি এমআরপি পাসপোর্ট না থাকে, তবে কারও চাকরি যাবে না, বা তাঁদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে না। তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে দেশে ফিরতে পারবেন, তবে ২৪ নভেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে বাইরে যেতে পারবেন না।
জনশক্তি রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা বলছেন, এমআরপি পাননি এমন বাংলাদেশির সংখ্যা সাত থেকে আট লাখের কম হবে না। বিশেষ করে যে তিন দেশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এমআরপির কাজ দেওয়া হয়েছিল, সেই সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় এমআরপির কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিয়োগকর্তাদের হাতেই পাসপোর্ট থাকে। নিয়োগকর্তাদের অবহেলার কারণে এই দেশগুলোতেও অনেকে এমআরপি পাননি। আবার মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কয়েক লাখ অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন। তাঁরাও সংকটে পড়বেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব অামিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, বাহরাইনসহ যেসব দেশে অনেক বেশি প্রবাসী শ্রমিক আছেন, সেখানে সবাই যেন এমআরপি পান, সে ব্যাপারে আমরা দূতাবাসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। যাঁরা এখনো এমআরপি নেননি, তাঁরা যেন দ্রুত নিয়ে নেন, সে বিষয়েও সবাইকে বলা হচ্ছে।’
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৮টি কার্যালয় থেকে ১ কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার ৬৭৬ জন এমআরপির জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৩৯৭ জন এমআরপি পেয়ে গেছেন। আর বিদেশে বাংলাদেশের ৬০টি দূতাবাস থেকে ২১ লাখ ৯৪ হাজার ৩০৯ জন এমআরপির জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ২১ লাখ ৬ হাজার ৬০৮ জন এমআরপি পেয়েছেন।
বিভিন্ন দেশে যাঁরা এমআরপি পাননি, তাঁদের কী হবে, জানতে চাইলে জিয়াউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি, বিভিন্ন দেশে যাঁরা এমআরপি পাননি, তাঁরা দেশে ফেরার আগেই করে নিতে পারবেন। আমরা সবাইকে এমআরপি নেওয়ার জন্য জোর প্রচার চালাচ্ছি।’