১৩ আসামির নাম-ঠিকানা আছে, তবু পাচ্ছে না পুলিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বান্ধবীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে এক যুবকের কাছ থেকে মুঠোফোন ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ ব্যক্তিরাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র, যাঁদের সবাই ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৩ শিক্ষার্থীর নাম-ঠিকানা চাওয়া হয়েছিল; তাঁদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশকেও তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তারা মামলার কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না।
গত ১৬ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বান্ধবীকে ধর্ষণ করার হুমকি দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আনসার আলীর কাছ থেকে মুঠোফোন ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেন একদল যুবক। পরে টিএসসির এটিএম বুথ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও মুঠোফোনে থাকা দুই হাজার তুলে নেন তাঁরা। হাতিয়ে নেন বান্ধবীর গলার চেইন ও কানের দুল।
শাহবাগ থানায় করা আনসার আলীর মামলা ও বুথের ভিডিও ফুটেজে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩১ আগস্ট টিএসসি এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজীব বাড়ৈ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অমিত কুমার দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সূর্য সেন হলের সাবেক ক্যানটিন বয় হাবিব এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঝাড়ুদার সোহেলকে।
সর্বশেষ ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়া দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. শাহিনুর ইসলাম পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করেন এবং আরও ১৩ জনের নাম ও বিভাগের নাম জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের সহায়তা চেয়ে চিঠি দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান। ওই চিঠি অনুযায়ী ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য ব্যক্তিরা হলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বিপ্লব মণ্ডল, দর্শন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বিধান রায়, পরিসংখ্যান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব মজুমদার, দর্শন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহিন, পালি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুক দে, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অ্যাসট্রোলিন, চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাশেল, আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র পার্থ, গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র লিয়ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেপাল সরকার, জুয়েল ও নাহিয়ানও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে চিঠিতে তাঁদের কেবল হলের পরিচিতি উল্লেখ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে পার্থ প্রথম আলোর প্রতিনিধির পরিচয় পাওয়ার পর কথা বলতে রাজি হননি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান প্রথমে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। গ্রেপ্তার করার উদ্যোগও নেওয়া যাচ্ছে না।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলী জানান, পুলিশকে সব ধরনের তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্ত সব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেই একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজীব বাড়ৈকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং বাকি ১৩ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রক্টরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরে যোগাযোগ করা হলে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আরে ভাই, শুধু নাম-ঠিকানা পেলেই তো হবে না। আরও অনেক কাজ রয়েছে।’
বাদী আনসার আলী বলেন, রাজীব ও অমিত জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই মামলা তুলে নিতে তাঁর সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান।