জাপান থেকে আসা দুই শিশু নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তাদের মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানোর করা আবেদনের (লিভ টু আপিল) ওপর ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগ আজ সোমবার শুনানি নিয়ে আদেশের এই তারিখ রাখেন।
শুনানিকালে দুই পক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘শোনেন, আমাদের একটি কথা আছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য রাখা হচ্ছে। তারপরও যেটি বলছি, সবকিছু আইনের ব্যাখ্যা বা আইন দিয়ে রেগুলেটেড হয় না। আমরা বলছি, যেহেতু এখনো সেপারেশন হয়নি দুজনের (শিশুদের মা ও বাবা), বাচ্চাদের ভবিষ্যতের দিকে খেয়াল করে দেখেন, আপনারা নিজেরা সেটেল করে ফেলতে পারেন কি না। কাগজেও আছে সেপারেট (মা ও বাবা) হয়নি। সেপারেট (বিবাহবিচ্ছেদ) হয়নি বলে বিয়ে বহাল আছে। আপনারা যদি ১৩ তারিখের ভেতর সেটেল করতে পারেন, তাহলে ভালো। তা না হলে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
২০০৮ সালের ১১ জুলাই এরিকো ও ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। তাঁদের তিন মেয়েসন্তান রয়েছে। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান।
গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে রয়েছে।
তবে ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে গত বছরের ১৯ আগস্ট রিট করেন এরিকো। পরে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে আরেকটি রিট করেন ইমরান।
এরিকো ও ইমরানের পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে গত ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে এরিকো আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় এরিকো নিয়মিত লিভ টু আপিল করেন, এসবের ওপর আজ শুনানি হয়।
আদালতে শিশুদের বাবার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অনীক আর হক।
শিশুদের মায়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে গত ২১ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন মা এরিকো, যা চেম্বার আদালত হয়ে গত ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আপিল বিভাগ দুই শিশুকে তাদের মায়ের কাছে রাখার আদেশ দেন। বাবা শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বলে আদেশে বলা হয়। পাশাপাশি আবেদনকারীপক্ষকে (শিশুদের মা) নিয়মিত লিভ টু আপিলও দায়ের করতে বলা হয়।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশের পর শিশুদের মা ২ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত লিভ টু আপিল করেন।
আজ আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, দুই শিশু কূটনৈতিক পাড়ায় অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলে তাদের মায়ের সঙ্গে আছে। লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। এই সময় পর্যন্ত শিশুরা আগের মতো মায়ের কাছে থাকছে।