১৯ জেলায় মৃত্যু, ৭টিতে অরাজকতা

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা দুই দফা অবরোধে গত আট দিনে ১৯ জেলায় ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সাতটি জেলায় কোনো প্রাণহানি না হলেও অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ২২ জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। ১৬টি জেলা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।
দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে, সংবাদ পর্যালোচনা করে এবং নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
১৯ জেলায় মৃত্যু: দুই দফায় আট দিনের অবরোধে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৯ জেলায় ৫০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় তিন দিনের অবরোধে মারা যান ২২ জন, দ্বিতীয় দফার অবরোধে গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনে মারা যান ২৮ জন। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় আটজন, চট্টগ্রামে আটজন, ঢাকায় ছয়জন, গাইবান্ধায় চারজন, সিরাজগঞ্জে তিনজন, কুমিল্লায় তিনজন, বগুড়ায় তিনজন, নরসিংদীতে দুজন, চাঁদপুরে দুজন, ফেনীতে দুজন, বরিশালে একজন, ঝিনাইদহে একজন, পাবনায় একজন, নাটোরে একজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন, নোয়াখালীতে একজন, কিশোরগঞ্জে একজন, গাজীপুরে একজন ও কক্সবাজারে একজন প্রাণ হারান। যানবাহনে আগুন, পেট্রলবোমা ও ককটেল হামলা, রেলপথে নাশকতা, অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, অবরোধকারীদের ধাওয়া ও সংঘর্ষ প্রভৃতিতে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব জেলায় নিয়মিতভাবে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
অরাজকতা আরও সাত জেলায়: আট দিনের অবরোধে দেশের আরও সাতটি জেলায় কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও সহিংসতা ও অরাজক ঘটনা ঘটেছে। এগুলো হলো: রাজশাহী, লালমনিরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, মেহেরপুর ও লক্ষ্মীপুর।
স্বাভাবিক ১৬ জেলা: মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, মাত্র ১৬ জেলার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ। এগুলো হলো: পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, নওগাঁ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, বাগেরহাট, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর। এসব জেলায় কর্মরত প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিচ্ছিন্নভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ছাড়া এসব জেলায় কোনো সংঘর্ষ বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এসব জেলাও স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ, ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন: গোটা দেশের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, পণ্য পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মাঠপর্যায়ের তথ্য অনুসারে, আট দিন অবরোধের এক দিনেও দেশের কোনো জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস ঢাকায় আসেনি। তেমনি জেলাগুলোর মধ্যে বা উপজেলা পর্যায়েও যাত্রীবাহী বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যম এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, নছিমন, রিকশা, মোটরসাইকেল প্রভৃতি।
পণ্য পরিবহনের আরও দুরবস্থা। এখন দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে রবি মৌসুমের সবজি রাজধানীতে আসার সময় হলেও ওই সব জেলা থেকে পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্যে ১১টিতে যোগাযোগ করতে হয় বগুড়ার মধ্য দিয়ে। দিনাজপুরে পণ্যবাহী ট্রাক না চলায় রবি মৌসুমের ফল, সার ও জ্বালানি তেল পরিবহন করা যাচ্ছে না। অবরোধের প্রথম দিন থেকে অচল হয়ে আছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। নওগাঁর আদমদীঘিতে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় খাদ্যগুদাম। প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত করে রাখতে সক্ষম এই গুদাম থেকে আট দিনে কোনো চাল বের করা যায়নি।
১২ জেলায় নৌ-যোগাযোগ স্বাভাবিক: রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় নৌপথে যাত্রী বাড়ছে। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলাসহ ১২টি জেলার সঙ্গে ঢাকার নৌপথে যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে। অবরোধের কোনো প্রভাব না পড়ায় প্রতিদিন এসব পথে যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে। এগুলো হলো: বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ।