নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে অনুসন্ধান কমিটির কাছে কোন ব্যক্তির নাম কে প্রস্তাব করেছেন, তা জানতে তথ্য অধিকার আইনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বরাবর আবেদন করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তবে তাঁকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার সকালে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে শুনানির আয়োজন করে তথ্য কমিশন। এতে দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের লিখিত বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
শুনানিতে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ ও দুই তথ্য কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন ও বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম, তথ্য অধিকার অধিশাখার উপসচিব মুহাম্মদ আসাদুল হক এবং আবেদনকারী বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। তথ্য কমিশন দুই পক্ষের বক্তব্য পেলে এ বিষয়ে ৬–৭ জুনের মধ্যে রায় দিতে পারে।
জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অনুসন্ধান কমিটিতে জমা পড়া ৩২২ জনের নামের তালিকা গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ১৬ ফেব্রুয়ারি কোন ব্যক্তির নাম কে প্রস্তাব করেছেন, তা জানতে চেয়ে ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন বদিউল আলম মজুমদার। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুল হক গত ২ মার্চ সেই তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাঁকে ই–মেইল করেন। সেই সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হয়ে বদিউল আলম মজুমদার মন্ত্রিপরিষদের নির্ধারিত আপিল কর্মকর্তার কাছে ৭ মার্চ আবেদন করেন। কিন্তু আপিল কর্মকর্তা সেই আবেদনের জবাব দেননি। এরপর গত ১১ এপ্রিল তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন তিনি।
গোপন তথ্য হলে, যার তথ্য তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যে ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করেছে, তাদের কাছ থেকে তো অনুমতি নেয়নি। অতএব এটি তো গোপন তথ্য নয়।
শুনানি শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন ও বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একজনের অধিকার দিতে গিয়ে আরেকজনের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারব না। তাঁর নাম যিনি প্রস্তাব করেছেন, তাঁর পরিচয় যদি প্রকাশ করি, তাহলে ওই ব্যক্তি তো বিপদে পড়ে যাবেন। এটি তো করতে পারি না। আমরা আইনগত বিষয়গুলো বলেছি। কমিশন শুনেছে। সিদ্ধান্ত কমিশনই নেবে।’
জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আমাকে যে লিখিত উত্তর দিয়েছে, তাতে এটি গোপন তথ্য বলে উল্লেখ নেই। তা ছাড়া গোপন তথ্য হলে, যার তথ্য তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যে ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করেছে, তাদের কাছ থেকে তো অনুমতি নেয়নি। অতএব এটি তো গোপন তথ্য নয়। ফলে কে কার নাম প্রস্তাব করেছে, সেটিও গোপন হওয়ার যৌক্তিকতা নেই।’
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে দুটি কারণ দেখিয়েছেন। তা হচ্ছে—তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নন এবং চাহিদার তথ্য সরবরাহ করার এখতিয়ার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেই।
আমরা একজনের অধিকার দিতে গিয়ে আরেকজনের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারব না। তাঁর নাম যিনি প্রস্তাব করেছেন, তাঁর পরিচয় যদি প্রকাশ করি, তাহলে ওই ব্যক্তি তো বিপদে পড়ে যাবেন। এটি তো করতে পারি না।
মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দুটি যুক্তিই অপ্রসাঙ্গিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। শুনানিতে তিনি বলেন, তথ্য আইনের ধারা ৪-এ সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোনো নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।’ অর্থাৎ যে কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য আছে, তাকেই তথ্য দিতে হবে—আইনের এ বিধানে কোনো অস্পষ্টতা নেই।
সুজন সম্পাদক বলেন, ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে তিনি আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট তথ্য তৃতীয় পক্ষের—এই যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন তাদের অনুমতি ছাড়া তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে আদালত তথ্য অধিকার আইনের অধীনে ‘কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের এই রায়ের আলোকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও তাঁকে চাহিদামতো তথ্য দিতে বাধ্য।