৩৮ এসপি এখনো দায়িত্ব পাননি

পদোন্নতি পান ৬৩ জন। পদায়ন হয় ২৪ জনের। ১ জন সাময়িক বরখাস্ত। ৩৮ জন পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত।

  • গত বছরের ৪ মে পদোন্নতি।

  • মে–নভেম্বর বেতন বন্ধ ছিল।

  • জুনে পদায়নের শর্তে বেতন চালু।

  • পদায়ন না হলে বেতন আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ভুক্তভোগীদের।

পদোন্নতি পাওয়ার এক বছর পরও ৩৮ পুলিশ সুপার (এসপি) কোনো দায়িত্ব কিংবা বসার চেয়ারও পাননি। আগামী মাসের মধ্যে পদায়ন করা না হলে তাঁদের বেতন আবারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে সাত মাস বেতন পাননি। আগামী জুনের মধ্যে পদায়ন করার শর্তে গত ডিসেম্বর থেকে তাঁদের মাসিক বেতন চালু করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ মে ২৭তম ব্যাচের ৬৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে পদোন্নতি দিয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে তখন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ন করা হয়। বাকি ৪৮ জনকে র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের উপপরিচালক হিসেবে পদায়নের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু র‌্যাব থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে উপপরিচালকের পদ খালি আছে ৯টি। শূন্য এসব পদে ৯ জন এসপিকে রেখে বাকি ৩৯ জনকে ফিরিয়ে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায় র‌্যাব। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩৯ জনের র‌্যাবে পদায়ন বাতিল করে তাঁদের পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করে। পরে তাঁদের মধ্যে একজনের ফোনে ‘নেতিবাচক’ কথোপকথন ফাঁস হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বাকি ৩৮ জন এখনো পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত আছেন।

অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক হবেন। শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠক হবে। ওই সব শূন্য পদে এই এসপিদের পদায়ন করা হবে।
মো. কামরুজ্জামান, মুখপাত্র, পুলিশ সদর দপ্তর

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তাদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, পদোন্নতি হওয়ার এক বছর পরও পদায়ন না হওয়ায় সামাজিক ও মানসিকভাবে চাপের মধ্যে আছেন তিনি। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর কাজের ব্যস্ততায় কোনো কোনো দিন খাওয়ার সময়ও পেতেন না। এখন তাঁদের অলস সময় কাটছে।

আরেকজন পুলিশ সুপার বলেন, পদোন্নতি পাওয়ার পর পদায়ন না হওয়ায় গত বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তাঁদের বেতন বন্ধ ছিল। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তাঁদের বেতন চালু করে। ওই প্রজ্ঞাপনে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে পদায়ন করার শর্তে বেতন চালুর কথা বলা হয়।

ভুক্তভোগী পুলিশ সুপারদের আশঙ্কা, জুনের মধ্যে পদায়ন করা না হলে তাঁদের বেতন আবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে র‌্যাব গঠনের সময় কোন বাহিনী থেকে কতজনের র‌্যাবে পদায়ন হবে, সে সম্পর্কে একটি অফিস আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে আসবেন ৪৪ শতাংশ সদস্য। বাংলাদেশ পুলিশ থেকেও আসবেন ৪৪ শতাংশ। বাকি ১২ শতাংশের আসার কথা বাংলাদেশ রাইফেলস (বর্তমানে বিজিবি), আনসার, ভিডিপি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড থেকে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, গত বছর ৪৮ জনকে পদায়নের আগে দীর্ঘদিন উপপরিচালক পদে এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা না পাওয়ায় সেই পদগুলোতে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। ৯টি উপপরিচালকের পদ খালি থাকায় গত বছর ৯ জন এসপিকে র‌্যাবে পদায়ন করা হয়।

এখন যে ৩৮ জন পদায়নের অপেক্ষায় আছেন, তাঁদের বিষয়ে কী হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র (সহকারী মহাপরিদর্শক, গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এসপি পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) হবেন। শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠক হবে। ওই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হলে সেসব শূন্য পদে এই এসপিদের পদায়ন করা হবে।