
ভাঙাচোরা মহাসড়কে দুলে দুলে চলছে গাড়ি। একবার গর্তে পড়ে গাড়ির মাথা কিছুটা নুয়ে পড়ছে, আবার উঠছে ওপরে। সঙ্গে ঝাঁকুনি। এ ঝাঁকুনিতে কাহিল হচ্ছে যাত্রীরা। চলতে গিয়ে পথচারীরাও পড়ছে ভোগান্তিতে। এ অবস্থা যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটারে।
যশোর শহরের পালবাড়ি থেকে অভয়নগর উপজেলার রাজঘাট পর্যন্ত ওই ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে এসব খানাখন্দে পানি জমে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এ অবস্থায় মহাসড়কটি দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিকল হচ্ছে যানবাহন।
ব্যবসায়ী ও পরিবহনশ্রমিকেরা বলেন, অভয়নগরের নওয়াপাড়া দেশের অন্যতম বড় শিল্প ও ব্যবসাকেন্দ্র। এখান থেকে প্রতিদিন চাল, গম, সার, সিমেন্ট, রড, পাথর এবং শিল্পপণ্য বোঝাই কয়েক শ ট্রাক মহাসড়কটি দিয়ে রাজধানীসহ দেশের উত্তরা, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় যায়। মহাসড়কটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় এসব পণ্য পরিবহনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
খুলনা থেকে ঢাকাগামী সোহাগ পরিবহনের একটি বাসের চালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যশোর থেকে রাজঘাট পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এ পথটুকু অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। রাজঘাট থেকে যশোর পর্যন্ত আগে এক ঘণ্টা সময় লাগত। এখন লাগছে প্রায় দেড় ঘণ্টা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের যশোর অংশের মোট দৈর্ঘ্য ৫০ দশমিক ৩২৫ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মহাসড়কটির বিটুমিনের আস্তরণে সংস্কারকাজ করা হয়। ১৬ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ১৫৪ টাকা ব্যয়ে মুড়লী মোড় থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার অংশের কাজ করে রাজশাহীর যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরবিএল-এএস (জেভি)। একই সময়ে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে অভয়নগরের রাজঘাট থেকে নওয়াপাড়া পৌরসভা ভবন পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল। সে সময় এসব কাজে নিম্নমানের পাথরের কুচি ও বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। সংস্কারের ছয় মাসের মধ্যেই মহাসড়কের ওই অংশের কয়েকটি জায়গায় বিটুমিন উঠে যায়। এরপর থেকে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা ঠিক রাখা হয়েছে।
১৩ আগস্ট সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কটির মুড়লী, রাজারহাট, গোপালপুর গেট, জামতলা, রূপদিয়া, শাঁখারীগাতী মোড়, পদ্মবিলা, ঘুনির মোড়, বসুন্দিয়া, প্রেমবাগ, উড়োতলা, চেঙ্গুটিয়া, ভাঙ্গাগেট, নওয়াপাড়া, তালতলা ও রাজঘাট অংশে রাস্তা ভেঙে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এসব খানাখন্দে জমছে বৃষ্টির পানি। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচল করায় খানাখন্দগুলো আরও গভীর হচ্ছে। খানাখন্দে পড়ে হেলে পড়ছে গাড়ি।
সওজ যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত মাসের শেষের দিকে সাত দিনের টানা বর্ষণে মহাসড়কটির লেয়ার নরম হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করার কারণে মহাসড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছি।’