ধর্ষণের এক ঘটনায় ভোলার চরফ্যাশনের আবদুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা ১০ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
‘ভুল আইনে’ আবদুল জলিলের বিচার হয়েছিল বলে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষকে এ ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিলেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে।
২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এক রায়ে ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল জলিলের জেল আপিল নিষ্পত্তি করে তাঁর দণ্ডাদেশ বাতিল করে রায় দেন। অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে আদালত আসামি আবদুল জলিলের জীবনের ১৪টি বছরের বিনিময়ে রাষ্ট্রপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার আদেশ দেন। ২০১৬ সালে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ বিলম্ব মার্জনা আবেদনসহ লিভ টু আপিল করে, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
পরে বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বিলম্ব মার্জনা চেয়ে করা লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ১০ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। হাইকোর্ট রুলস অনুসারে যাবজ্জীবন দণ্ডিত কোনো আসামির জেল আপিল হাইকোর্টের একক বেঞ্চ শুনানি করতে পারেন না—এটিসহ কয়েকটি যুক্তিতে লিভ টু আপিলটি করা হয়। চেম্বার আদালত লিভ টু আপিলটি ২৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশীর পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে ‘প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের’ অভিযোগে পরদিন চরফ্যাশন থানায় মামলা হয়।
ওই মামলায় ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট আবদুল জলিলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে জলিল হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই জেল আপিল মঞ্জুর করে জলিলের দণ্ডাদেশ বাতিল করে মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য বিচারিক আদালতে পাঠান। এরপর ২০১০ সালের ৮ মার্চ ভোলার অতিরিক্ত দায়রা জজ জলিলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে আবারও জেল আপিল করেন জলিল। এই জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নাবালক হলেও জলিলের বিচার শিশু আইনে হয়নি; যার ফলে তিনি আইনের আশ্রয় পাননি। হাইকোর্ট আসামিকে নাবালক বললেও নিম্ন আদালতের বিচারক তাতে গুরুত্ব দেননি; ফলে শিশু জলিল অবিচারের শিকার হয়েছেন।