৭ মিনিটে কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল

রাজধানীর কাকরাইল এলাকার রাস্তা
ছবি: দীপু মালাকার

রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা। আজ রোববার সকাল থেকে রোজকার ব্যস্ত নগরীর চেহারা ছিল অনেকটাই অচেনা। প্রতিদিনের ভিড়, যানজট, ঠেলাঠেলি ছিল না। ফাঁকা রাস্তায় যানবাহনের উপস্থিতিও কম। স্বস্তিতে মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে চলাচল করছেন।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিন দেখা যায়, ঈদের ছুটিতে কমে এসেছে বাসের ভিড়। বিপণিবিতানেও খুব বেশি ভিড় নেই। শুধু যাঁরা ঢাকাতেই থাকছেন, তাঁরাই যেন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য বাইরে বের হয়েছেন।

দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে মোটরসাইকেলে মাত্র সাত মিনিটেই মতিঝিলে যাওয়া গেছে। বেলা ১টা ১০ মিনিটে কারওয়ান বাজার থেকে বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন ও ফকিরাপুল হয়ে ১টা ১৭ মিনিটেই মতিঝিল পৌঁছে যান এই প্রতিবেদক।

এ সময় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ওই দূরত্বের পথে কোনো জায়গায় ঢাকার চিরচেনা যানজটের দৃশ্য দেখা যায়নি। শুধু পল্টন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি বিপণিবিতানের সামনে বাসগুলো যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের গতি কিছুটা ধীর হচ্ছে। তবে যানজটে আটকাতে হচ্ছে না।

মতিঝিলে গিয়ে দেখা যায়, সড়কে যানবাহনের চাপ একেবারেই কম। এ কারণে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সদস্যরাও ট্রাফিক বক্সের ভেতরে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সড়কে সংকেত দেওয়ারও প্রয়োজন হচ্ছে না।

মতিঝিল এলাকায় দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ি নেই বললেই চলে। খুবই কম। পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতেই হচ্ছে না। সংকেত ছাড়াই যানবাহন চলতে পারছে।

পরে মতিঝিল বক চত্বর থেকে গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট, জিরো পয়েন্ট দিয়ে শাহবাগ হয়ে কারওয়ান বাজার পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ মিনিট। তখন শুধু গুলিস্তানে স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে ও কারওয়ান বাজার চত্বরে যানবাহনের হালকা ভিড় দেখা যায়।

এর আগে সকালে একটি গণমাধ্যমের কর্মী প্রদীপ সরকার সংবাদ সংগ্রহের কাজে কারওয়ান বাজার থেকে পল্টনের উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে গাবতলী-৮ নম্বরের একটি বাসে উঠে তিনি ১০টা ২২ মিনিটেই পৌঁছে যান পল্টনে।

প্রদীপ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বাসে উঠেই অন্য দিনের মতো মুঠোফোনে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করেন বাসটি পল্টন মোড় পার হয়েছে গেছে। যেন চোখের পলকেই সেখানে পৌঁছে যান তিনি।

আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী দুপুর ১২টার দিকে ইস্কাটন থেকে তাঁর সন্তানকে চিকিৎসক দেখাতে ইস্কাটন থেকে ধানমন্ডির ৯/এ–তে যান। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এরপর ধানমন্ডি-২ নম্বর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাংলামোটর হয়ে কারওয়ান বাজার আসতে তাঁর সময় লাগে পাঁচ মিনিটের মতো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, গত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকেই মানুষের বাড়ি যাওয়া শুরু হয়েছে। এর পর থেকেই পর্যায়ক্রমে চাপ কমে গেছে। তবে তখন যাঁরা যেতে পারেননি, গত দু-তিন দিনে তাঁদেরও একটা বড় অংশ চলে গেছে। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের পথে যানজট না থাকায় ওই চাপ ঢাকাতেও হয়নি। টার্মিনালগুলোতেও তেমন ভিড় ছিল না।

ঈদের ছুটিতে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে মুনিবুর রহমান বলেন, রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তাঁদের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ, রাস্তা ফাঁকা থাকলেও অনেক সময় অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা এড়াতে বড় ও প্রশস্ত সড়কগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিবন্ধক বসিয়ে কিছুটা আঁকাবাঁকা (জিগজ্যাক) পথ তৈরি করে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।