করোনা পরিস্থিতির কারণে আরও অনেকের মতোই গত দুই বছর চিরচেনা মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেননি চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের বাসিন্দা আফসার উদ্দিন। এ নিয়ে খুব আক্ষেপ ছিল তাঁর। আজ মঙ্গলবার নগরের দামপাড়ায় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে আবারও ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন আফসার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আহ্! কত দিন পর ঈদের আনন্দ ফিরে পেলাম। অনেক মানুষের সঙ্গে নামাজ আদায় করার মতো সৌভাগ্য আর হয় না।’
আফসার উদ্দিন আরও বলেন, গত দুই বছর করোনার দাপটে কী যে এক অসহনীয় পরিবেশে থাকতে হয়েছে, তা বলার মতো নয়। কোভিড-আতঙ্কের কারণে টানা দুই বছর এই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসতে পারেননি। এবার করোনার প্রকোপ নেই। মহামারির বিষণ্ন সময়ও কেটে যাচ্ছে। নামাজ শেষে সবাই সবার সঙ্গে কোলাকুলি এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। সব মিলিয়ে আগের সে আন্তরিক পরিবেশ ফিরে এসেছে।
শুধু আফসার উদ্দিন নন, স্বস্তির পরিবেশে ঈদ উদ্যাপন করতে পারায় অন্যদের চোখেমুখেও ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দের চিহ্ন। এই আনন্দময় পরিবেশ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে চট্টগ্রামে উদ্যাপিত হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। চট্টগ্রাম নগরের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার সকাল আটটায়। এতে ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী।
দুই বছর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবার ঈদ জামাতকে ঘিরে বাড়তি উৎসাহ ছিল নগরবাসীর মধ্যে। জামাতে শামিল হতে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে হাজির হন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ।
নামাজের পর মোনাজাতে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ কামনা করা হয়। করোনা থেকে চিরতরে মুক্তি এবং ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য দোয়া কামনা করা হয়। এরপর রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগরের বহদ্দারহাটে নিজ বাড়ির মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে নামাজ আদায় করার পর কাজী মহসিন বলেন, গত দুই বছর ভীতিকর অবস্থা ছিল। অনেক দিন পর যেন উৎসব উদ্যাপনে স্বস্তির পরিবেশ ফিরেছে। একটাই কামনা থাকবে ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রজন্মকে মহামারির মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়। তাঁদের উৎসব যেন কখনো ম্লান না হয়।
নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা মো. আজিজুর রহমান বলেন, দুই বছর পর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে আবার ঈদের নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য হওয়ায় খুব আনন্দিত।
জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়। জমিয়াতুল ফালাহ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে নগরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, হজরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদে (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামসংলগ্ন) ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত নিজ নিজ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।