পীরগঞ্জে কৃষিজমিতে হচ্ছে ছয়টি ইটভাটা

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমিতে ছয়টি ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইটভাটার চারপাশে বিস্তীর্ণ সবুজ ধানখেত। খেতের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ভাটার চিমনি। তবে এসব ইটভাটার মধ্যে তিনটির চিমনি ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। বাকি তিনটির চিমনির কাজ চলছে। সম্প্রতি এসব ভাটায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কৃষিজমি, আবাসিক এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিগত বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।’ ৮(২) ধারায় আছে, ‘নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে না।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান সম্প্রতি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফসলি জমিতে ইটভাটা করার কোনো লাইসেন্স বা ছাড়পত্র দেওয়া হবে না।’

পীরগঞ্জ-জাবরহাট সড়কের বীরাহালি পুকুরের কাছে মল্লিকপুর কান্দরেরধানখেতে ‘এসবি-২’ নামের ইটভাটা স্থাপন করছেন পীরগঞ্জ বাজারের মিজানুর রহমান। ওই ভাটার শ্রমিকেরা বলেন, দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য সলিম উদ্দীনের ছয় বিঘাসহ আরও কয়েকজন চাষির আবাদি জমি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। আষাঢ় মাস থেকে ভাটা নির্মাণের কাজ চলছে। অগ্রহায়ণ মাসে ইট পোড়ানোর কাজ শুরুর কথা রয়েছে।

ভেলাতৈড় গ্রামে ফসলি জমিতে ‘এমবি-২’ নামের ইটভাটা নির্মাণ করছেন মো. সাহজাহান। ভেমটিয়া গ্রামেএমবি’ নামে তাঁর আরও একটি ইটভাটারয়েছেসাহজাহান পীরগঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতিও।তিনি তাঁর নিজের জমিসহ ওই গ্রামের কয়েকজন কৃষকের জমি ভাড়া নিয়ে ভাটা করছেন।

উত্তর গুয়াগাঁও গ্রামের ফসলি জমিতে ‘বিবিএস’ নামের ইটভাটা স্থাপন করছেনমো. বাবলা। উত্তর গুয়াগাঁওয়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বাবলা ওই গ্রামের কিনু, সাহজাহান, মাহাবুবসহ সাত-আটজন কৃষকের ১৫-১৬ বিঘা আবাদি জমি বিঘাপ্রতি বার্ষিক ১৮-২০ হাজার টাকা ভাড়ায় পাঁচ বছরের জন্য নিয়েছেন।

সিন্দুরনা গ্রামের ফসলি জমিতে ‘জেআর’ নামের ইটভাটা নির্মাণ করছেন জয়নাল আবেদীন ও রেজওয়ানুল ইসলাম। দস্তমপুর গ্রামের তিনজন কৃষক বলেন, দস্তমপুর ও সিন্দুরনা গ্রামের সোমানু রাম,গপেশ চন্দ্র, বিনাদ চন্দ্র, নগেন চন্দ্র রায়সহ আট-নয়জন কৃষকের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি বার্ষিক ১৫-২০ হাজার টাকা ভাড়ায় তাঁরা ইটভাটা করছেন।

দৌলতপুর গ্রামের ফাসিডাঙ্গা কান্দরের কৃষিজমিতে ‘বিএসবি’ নামের ভাটা নির্মাণ করছেন রেজওয়ানুল হক ও মো. সুমন। ভাটার শ্রমিকেরা বলেন, রঘুনাথপুর গ্রামের মকশেদুল আলমের ফসলি জমি বিঘাপ্রতি বছরে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা ভাড়ায় সেখানে ভাটা করা হচ্ছে।

ভেমটিয়া গ্রামে ভাটা নির্মাণকরছেন গুয়াগাঁও গ্রামের বেলাল হোসেন। সিন্দুরনা গ্রামে ‘এসবিএস’ নামে তাঁর আরও একটি ইটভাটা রয়েছে। তবে বেলালের ছেলে সাদেকুল ইসলাম বলেন, নতুন ভাটাটি তাঁর (সাদেকুল) নামে হচ্ছে।

এ ছয়টি ভাটা বাদে উপজেলার আরও নয়টি পুরাতন ইটভাটা রয়েছে।

মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সুবাহান বলেন, ‘ধানের জমিতে ভাটা করা বেআইনি জেনেও মল্লিকপুর কান্দরের ধানের জমিতে ইটভাটা হয়ে গেল টাকার জোরে। সরকারের লোক কি এটা দেখেন না? সিন্দুরনা গ্রামের রমেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘তিন বছরে সিন্দুরনা ও নোহালী গ্রামের ফসলি জমিতে তিনটি ভাটা হয়ে গেল। ভাটার চিমিনর ধোঁয়া, বালু, কয়লার গুঁড়া ও ছাই উড়িয়ে আশপাশের ফসল, বাগান ও গাছপালার ক্ষতি করতে পারে বলে আমার ভয় হচ্ছে।’

তবে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি সাহজাহান বলেন, ‘উঁচু-অনুর্বর জমিতেই ভাটা করছি। চাষিরা উঁচু জমি নিচু করার জন্য আমাকে জমি দিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কৃষিজমিতে ভাটা করার পক্ষে প্রত্যয়ন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কয়েকজন ভাটার মালিক প্রত্যয়নপত্র চেয়েছেন কাউকে দিইনি।’

পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ফসলি জমিতে ইটভাটা করার জন্য কোনো লাইসেন্স বা ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। ছাড়পত্র ছাড়া কেউ ভাটা করলে তা তিনি নিজ দায়িত্বেই করবেন।’