পরশুরামে কেউ আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চান না!

ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে এবারও পাঁচটিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। এর মধ্যে ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বাদ পড়েন বিএনপির মনোনীত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্য চারটি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গতকাল শুক্রবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
দ্বিতীয় ধাপে গত মার্চ মাসে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের নয়টি ইউপিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রার্থীদের অব্যাহত হুমকি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মারধর করার ঘটনায় ফুলগাজীর ছয় ইউপির নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। আর পরশুরামের তিন ইউপির প্রতিটিতেই চেয়ারম্যান পদে মাত্র একজন করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় সেখানেও ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
পরে দুটি উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। ৩১ অক্টোবর নয়টি ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাহেদা আক্তার গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল। চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদের অনেক প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন তিন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মাত্র একজন করে প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে তিন ইউনিয়নে নয়জনের মধ্যে আটজন এবং তিন ইউনিয়নের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪ জন সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।
সাহেদা আক্তার বলেন, উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নে সাতটি সাধারণ ওয়ার্ডে, চিথলিয়া ইউনিয়নে তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে ও বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে তিনটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের মধ্যে একটি এবং তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কারণ জানতে চিথলিয়া ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুর রবের সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যা থেকে মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এর মধ্যে একবার তাঁর মেয়ে পরিচয় দেওয়া একজন ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘বাবা অসুস্থ। ওষুধ কিনতে বাইরে গেছেন।’
জানতে চাইলে পরশুরাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দল মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছে কি না, তা তিনি জানেন না।
পরশুরামের তিন ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা হলেন মির্জানগর ইউনিয়নে মো. নুরুজ্জমান ওরফে ভুট্টু, চিথলিয়া ইউনিয়নে জসিম উদ্দিন এবং বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে জাকির হোসেন চৌধুরী।
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, চাপের কারণেই বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
অবশ্য ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান দাবি করেন, নিশ্চিত পরাজয় জেনেই পরশুরাম ও ফুলগাজীর বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সরে দাঁড়িয়েছেন।
এদিকে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। তাঁরা হলেন আনন্দপুর ইউনিয়নে হারুন মজুমদার ও দরবারপুর ইউনিয়নে নিজাম উদ্দিন মজুমদার।
দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, পরশুরাম ও ফুলগাজীতে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা চাপ দিচ্ছেন। এ কারণে পাঁচজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।