সুবিধা থাকলেও মেলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

আধুনিক চিকিৎসাসেবার জন্য নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। অধিকতর সেবার জন্য সন্ধ্যাকালীন বহির্বিভাগও চালু করা হয়েছে। তবে সংকট শুধু চিকিৎসকের। মানুষ পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাঁটাতারের সীমানাপ্রাচীর দিয়ে কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে জরুরি বিভাগ, ওয়ার্ডসহ বারান্দায় বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। ভ্যাকসিনের গুণগত মান ধরে রাখতে দুটি রেফ্রিজারেটর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে আইপিএস। কর্তব্য পালনের সময় ক্লান্ত চিকিৎসক ও নার্সের জন্য তৈরি করা হয়েছে তিনটি বিশ্রামাগার। অপেক্ষমাণ সেবাপ্রত্যাশীদের বিনোদনের জন্য বহির্বিভাগে রয়েছে দুটি টেলিভিশন। জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে আছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। এমনকি রোগীর ব্যবস্থাপত্রটিও উন্নত অফসেট কাগজে ছাপা। ৩১ শয্যার হাসপাতালের সাধারণ সব সেবার পাশাপাশি বাড়তি প্রসূতি (সিজারিয়ান) অস্ত্রোপচার, আলট্রাসনোগ্রাফি ও ইসিজি-সেবাও চালু আছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরীক্ষামূলকভাবে দেশের যে নয়টি হাসপাতালে সন্ধ্যাকালীন বহির্বিভাগ চালু করেছে, তার মধ্যে এ হাসপাতাল একটি। তবে অভাব শুধু চিকিৎসকের।
আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু সায়িদ মো. ফারুক বলেন, এত সব বাড়তি সুবিধার হাসপাতাল খুব কমই আছে। সংকট শুধু চিকিৎসকের। তার ওপর সীমিত চিকিৎসক নিয়ে সন্ধ্যাকালীন বহির্বিভাগ সেবা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
দাপ্তরিক সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২২ জন ও ৩১ শয্যায় ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসক পদ রাখা হয়েছে সাতটি। এর মধ্যেই চালু করা হয়েছে সন্ধ্যাকালীন বহির্বিভাগ। দুপুর দুইটার মধ্যে সাধারণ কর্মদিবসের বহির্বিভাগ বন্ধ হলেও রাত আটটা পর্যন্ত সন্ধ্যাকালীন সেবা চালু রাখতে হয়।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সাত চিকিৎসকের মধ্যে পাঁচজন নেই। অনুপস্থিত চিকিৎসকের মধ্যে মাজহারুল রাসেল ও হাসান নাজমুস ১৫ দিনের অর্জিত ছুটি ভোগ করছেন। মন্দিরা সরকার নৈমিত্তিক ও তাহমিনা আক্তার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রাফিয়া সুলতানার। ফলে জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচার, অন্তর্বিভাগ, আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি-সেবা ও সান্ধ্যকালীন সেবা চালু রাখতে হয়েছে দুই চিকিৎসককে দিয়ে।
তা-ও আবার চিকিৎসকেরা সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারেননি। সকাল আটটা থেকে বহির্বিভাগ চালু থাকার কথা থাকলেও ফটকের তালা খোলা হয় সকাল সাড়ে আটটার দিকে। সাড়ে নয়টার পর বহির্বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর পৌনে ১২টার মধ্যে ডেন্টাল সার্জন সুলতান আহমেদ ১৫ জন ও অর্থোপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট আবুল কাসেম ১৭ জন রোগীকে স্বাস্থ্যসেবা দেন। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আইনুল ইসলাম ও শ্রাবন্তী রায়কে এনে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সামাল দেওয়া হয়। দুপুরের মধ্যে তাঁরা বহির্বিভাগে ২৫৩ জন রোগীর সেবা দেন। সেবাপ্রত্যাশী থাকলেও লোকবলের অভাবে দুপুরের আগে কোনো আলট্রাসনোগ্রাফি করা যায়নি। ইসিজির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। গাইনি চিকিৎসকের অভাবে দুই সপ্তাহ ধরে প্রসূতি অস্ত্রোপচার বন্ধ।
সেবাপ্রত্যাশী মনোহরদীর শ্রীফুলিয়া গ্রামের জামির আলীর স্ত্রী সাজেদা বেগম (৪৫) বলেন, ‘লম্বা লাইনে দাঁড়াইয়া দুই ঘণ্টা পর ডাক্তারের দেখা পাইছি। বেশি ডাক্তার থাকলে এত কষ্ট করতে হইত না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের চিকিৎসক ও কয়েকজন নার্স বলেন, লোকবল-সংকটের কারণে স্বাভাবিক কর্মদিবস ভালো করে শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় সন্ধ্যাকালীন সেবা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, সমস্যা থাকলেও এভাবেই চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন রাজিয়া সুলতানা বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের অনুরোধে সন্ধ্যাকালীন সেবা চালু করা হয়েছে। এখন চাইলেও বন্ধ করা যাবে না। দ্রুত চিকিৎসক-সংকট দূর করার চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানান।