নতুন পশুশাবকের আকর্ষণে চিড়িয়াখানায় দর্শকদের ভিড়

জাতীয় চিড়িয়াখানায় জলহস্তী ও জেব্রার শাবক দেখতে দর্শনার্থী​েদর ভিড়। ছবিটি গত শুক্রবার তোলা l ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় চিড়িয়াখানায় জলহস্তী ও জেব্রার শাবক দেখতে দর্শনার্থী​েদর ভিড়। ছবিটি গত শুক্রবার তোলা l ছবি: প্রথম আলো

জলহস্তী আগন্তু আর জেব্রা কুইনের শাবক দেখতে ওদের খাঁচার সামনে ভিড় জমাচ্ছিলেন দর্শনার্থীরা। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার এই দুই নতুন অতিথির কাণ্ডকীর্তি দেখতে কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। কেউ কেউ নিজেদের সন্তানকে কাঁধে তুলে দেখাচ্ছিলেন চিড়িয়াখানার ওই বাসিন্দাদের। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল শুক্রবার উৎসুক দর্শনার্থীর উপস্থিতিও ছিল অনেক বেশি।

গত ২১ সেপ্টেম্বর চিড়িয়াখানায় জলহস্তী আগন্তুর ঘরে আসে নতুন অতিথি। দিনক্ষণের হিসাবে মাত্র এক মাস পেরিয়েছে ওর। অথচ ভীষণ চালাক। সুযোগ পেলেই মায়ের দুধ পান করে নেয়। মায়ের মমতায় এর মধ্যে ওর ওজন এক মাসে প্রায় ৩৫ কেজি বেড়েছে। জন্মের সময় ছিল ৪০ কেজি ছিল, এখন হয়েছে প্রায় ৭৫ কেজি।

গত শুক্রবার বিকেলে দেখা যায়, শেডের ভেতর কাদাপানিতে সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে রাখছে, আবার শুকনো জায়গায় এনে হাঁটাচলা করানোর কাজ করছে মা জলহস্তী। খাঁচার ভেতরে বড় দুই ভাই জলহস্তীর সঙ্গে কখনো মারামারি করছে। মা আগন্তুর পেছনে আঠার মতো লেগে থাকছে।

জলহস্তী-শাবকটির দুষ্টুমি বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার কর্তাব্যক্তিদের উদ্বেগ লাঘব করেছে। চিড়িয়াখানার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শাহাদাৎ বলেন, ‘জলহস্তীর বাচ্চার এই ছোটাছুটির অর্থ হচ্ছে ওরা সুস্থ আছে, পরিণত হয়ে উঠছে।’ উপস্থিত দর্শকেরাও জলহস্তী মা ও সন্তানকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। কেউ মুঠোফোনে সেলফি তোলার চেষ্টা করছিলেন, কেউ ওদের হাঁটাচলার দৃশ্য ধারণ করছিলেন। খুদে দর্শকেরাও হাত নেড়ে জলহস্তীদের আনার চেষ্টাও করছিল।

চিড়িয়াখানায় এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রাণী জন্ম নিয়েছে জানিয়ে কিউরেটর নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন প্রাণীর আগমন ও শাবকের জন্ম চিড়িয়াখানায় দর্শকদের আকর্ষণ অনেক বেড়েছে। জেব্রা-জলহস্তী শাবকদের নতুন নাম দেওয়া হবে।’

জেব্রা কুইন শাবকের জন্ম হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর। জলহস্তীর মতো জেব্রা-শাবকটিও সুস্থ-সবল রয়েছে। এরই মধ্যে শাবকটি বুঝে গেছে তার কদর। তাই কখনো লেজ নাড়াচ্ছে, কখনো দুধ খাওয়ার জন্য মায়ের শরীরের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখছে।

গত শুক্রবার দেখা যায়, অন্য দুই সঙ্গীর সঙ্গে মা কুইন খাবার খাচ্ছে। মায়ের শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে শাবকটি। জন্মের পরে মাস না পেরোতেই বেশ চটপটে হয়ে উঠেছে শাবকটি। মাঝেমধ্যেই মা কুইন শাবকটিকে নিয়ে খাঁচার সীমানা দেয়ালের কাছাকাছি আসছে। তাতে যেন উপস্থিত দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে যাচ্ছে।

সন্তানকে কাঁধে তুলে জেব্রার বাচ্চা দেখাচ্ছিলেন জাহান আলী। তিনি বলেন, ‘এমন নতুন নতুন প্রাণী দেখলে বাচ্চাদের ভালো লাগে। জেব্রার বাচ্চা দেখে ওরা খুব খুশি হয়েছে।’ বাবার কাঁধে চড়ে জেব্রা দেখতে থাকা সাদাফ বলল, ‘অনেক কিছু দেখেছি। এখন জেব্রার বাচ্চা দেখছি। বাচ্চা অনেক সুন্দর।’

চিড়িয়াখানার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শাহাদাৎ বলেন, জন্ম নেওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে হাঁটাচলা শুরু করে জেব্রাশাবকটি। এর দুই ঘণ্টা পর মায়ের দুধ পান করে। এভাবে আরও কিছুদিন মায়ের দুধ পান করানো হবে। এরপর ঘাস, ভুসি খেতে দেওয়া হবে।