তিন কলেজের মাঠে পশুর হাট শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত

যশোরের বাঘারপাড়ায় ভাঙ্গুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে পশুর হাট বসেছে। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
যশোরের বাঘারপাড়ায় ভাঙ্গুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে পশুর হাট বসেছে। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

যশোরের বাঘারপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ, নারকেলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ ও ভাঙ্গুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসানো হচ্ছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করার জায়গা পাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো হাট বসানো যাবে না। বিষয়টি সত্য হলেবাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দিয়ে কলেজ মাঠে হাট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

গত শনিবার বাঘারপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গরু-ছাগল বাঁধার জন্য মাঠের চারপাশ ও ভেতরে বাঁশ টাঙিয়ে রাখা আছে। ছোট ছোট বাঁশের টুকরা পুঁতে রাখা হয়েছে মাঠজুড়ে।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসে। সেদিন কলেজের বারান্দায় পর্যন্ত গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হয়। এদিন কলেজের শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

কলেজের সামনের কয়েকজন দোকানদার বলেন, কলেজের মাঠে হাট না বসানোর জন্য অধ্যক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।

চায়ের দোকানদার ইরাদ আলী বলেন, এখানে স্থানীয়ভাবে দোকানদারদের লাল দল, ছোটদের বিচ্ছু বাহিনী ও শ্রমিকদের নিয়ে আরেকটি ফুটবল দল ছিল। মাঠে ১৬ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। মাঠ না থাকাতে এখন আর তেমন ফুটবল খেলা হয় না।

কলেজের অধ্যক্ষ আজগর আলী বলেন, ‘মাস তিনেক আগে থেকে মাঠে হাট বসানো হচ্ছে। টাকাপয়সার জন্য নয়, আমি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এ কারণে অস্থায়ীভাবে হাট বসতে দিতে হয়েছে।’

ভাঙ্গুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজের কর্মচারীরা বলেন, প্রতি সোম ও শুক্রবার এ মাঠে হাট বসে। কলেজের অধ্যক্ষ কাজী শফিকুল ইসলাম নিজের নামেই হাটের ইজারা নিয়েছেন। কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়ে তিনি হাটের টোল আদায় করান। টোল আদায়ে যেতে না চাইলে অধ্যক্ষ চাকরি হারানোর ভয় দেখান। হাটের দিনে কলেজের বারান্দা ও শ্রেণিকক্ষেও গরু-ছাগল বাঁধা হয়।

কলেজ সূত্র জানায়, প্রতি হাটে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা টোল আদায় হয়। এসব টাকা সরকারদলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ও কলেজের অধ্যক্ষ ভাগাভাগি করে নেন। কলেজের তহবিলেও কিছু টাকা দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষ কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নামে হাটের ইজারা নেওয়া হলেও টোল আদায়ের টাকা কলেজের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। স্থানীয়ভাবে মসজিদ-মাদ্রাসায়ও এ টাকার ভাগ যায়। ৮ থেকে ১০ বছর ধরে কলেজ মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসানো হচ্ছে। টোল আদায়ের জন্য কর্মচারীদের জোর করা হয় না।’

এক বছর ধরে প্রতি মঙ্গলবার নারকেলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসানো হচ্ছে। এ কলেজের অধ্যক্ষ মিহির কুমার সাহা বলেন, ‘সাংসদ মহোদয়ের অনুরোধে কলেজের সভাপতি তুলসী দে মাঠে হাট বসানোর কথা বলেন। তবে হাট বসাতে আমার আপত্তি রয়েছে।’ তুলসী দেও একই কথা বলেন।

তবে সাংসদ রণজিৎ কুমার রায় বলেন, ‘হাট বসানোর দায়িত্ব ইউএনওর। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

ইউএনও আশেক হাসান বলেন, হাট তুলে দিতে তিনটি কলেজকেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। তুলে না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।