চিকিৎসক ও নার্স-সংকটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র আটজন। অপরদিকে ১৬ জন নার্সের স্থলে মাত্র ছয়জন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের।

১৭ অক্টোবর বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ৭০-৮০ জন রোগী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভিড় করেছেন। বেশ কয়েকজন রোগী জানান, হৃদ্‌রোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ না থাকায় অনেক রোগীকে চট্টগ্রাম শহরের হাসপাতালগুলোতে ছুটতে হচ্ছে। উপজেলা সদর থেকে আসা মো. ইলিয়াস বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখানোর জন্য হাসপাতালে এসেছি। অথচ এখানে এসে জানতে পারি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নেই।’

চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে আসা দরিদ্র রোগীরাই বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এসব রোগীর শহরে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর সামর্থ্য নেই।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) মো. হানিফ জানান, এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে তিনিসহ মাত্র আটজন কর্মরত আছেন। এই আটজনের মধ্যে পাঁচজন হলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, অর্থোপেডিকস এবং চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎ​সক থাকলেও সাতজনের পদই শূন্য। মেডিসিন, সার্জারি, শিশু, নাক, কান ও গলা, চক্ষু, হৃদ্‌রোগ ও ডেন্টাল সার্জন না থাকায় চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। এ ছাড়া অবেদনবিদও নেই হাসপাতালে।

মো. হানিফ আরও বলেন, হাসপাতালে ১৬টি নার্সের পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ছয়জন। মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের (সাকমো) ১০টি পদের মধ্যে অর্ধেকই নেই। এ ছাড়া পাঁচজন ফার্মাসিস্টের স্থলে আছেন মাত্র একজন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও চিকিৎসক–সংকট রয়েছে বলে জানান তিনি। এ কারণে ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল ২৬ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তর্বিভাগে ভর্তি ছিল ৩৮ জন রোগী। হাসপাতালে নার্স–সংকটের কারণে রোগীর দেখভালের দায়িত্ব চাপে সঙ্গে থাকা আত্মীয়স্বজনের ওপর।

 লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের বাসিন্দা তসলিমা বেগম তাঁর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দেড় মাস বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে এসেছেন পাঁচ দিন আগে। হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়ে তাঁর শিশু অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। তসলিমা বলেন, পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় তাঁকে তাঁর শিশুর স্বাস্থ্যের তদারক করতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার প্রদীপ কান্তি দে বলেন, হাসপাতালে ১৬ জন নার্সের মধ্যে কেবল ছয়জন কর্মরত। এই কারণে যাঁরা আছেন, তাঁদের ওপর চাপ বেশি পড়ছে। তাঁদের একাধিক পালায়ও কাজ করতে হচ্ছে।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক–সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসকেরা দ্রুত বদলি হয়ে যান। অনেকে প্রশিক্ষণেও যান। এই সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি আমরা।’