চার কোটি টাকার সুইমিংপুল ১৬ বছর ধরে পরিত্যক্ত

বরিশাল শহরের একমাত্র সরকারি সুইমিংপুলটির বেহাল অবস্থা। সুইমিং ট্রাকের লাইনগুলো অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে এবং ঢাকানাবিহীন অবস্থায় আছে পানি অপসারণের নালা (বাঁয়ে)। যত্নের অভাবে প্রায় জরাজীর্ণ পানি তোলার লাইন l ছবি: সাইয়ান
বরিশাল শহরের একমাত্র সরকারি সুইমিংপুলটির বেহাল অবস্থা। সুইমিং ট্রাকের লাইনগুলো অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে এবং ঢাকানাবিহীন অবস্থায় আছে পানি অপসারণের নালা (বাঁয়ে)। যত্নের অভাবে প্রায় জরাজীর্ণ পানি তোলার লাইন l ছবি: সাইয়ান

বরিশাল বিভাগের একমাত্র সরকারি সুইমিংপুলটি ১৬ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। নির্মাণকাজে ত্রুটির কারণে উদ্বোধনের পর এটি এক দিনের জন্যও ব্যবহার করা যায়নি।
এর ফলে নির্মাণের ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার পুরোটাই গচ্চা গেছে বলে মনে করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, এটি এখন আর সংস্কারযোগ্য নেই। সংস্কার করা হলেও তাতে টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই হবে না।
বরিশাল শহরের চাঁদমারি এলাকায় সুইমিংপুলটি নির্মাণ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুলের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট ও চুরি হয়ে গেছে। নিম্নমানের কাজের কারণেই এই দশা হয়েছে বলে মনে করছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা।
পুলটির কূপ স্টিলের পাত দিয়ে ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় কাঠের তক্তা দিয়ে। ফলে ঢালাই ভালোভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় কূপে পানি দেওয়ার পরই তাতে ফাটল ধরে। এরপর কয়েক দফা মেরামত, টাইলস লাগানো, দুটি পাম্প স্থাপনসহ নানা কিছু করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বরিশাল স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এই স্থাপনাটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। ১৯৯৭ সালের ১ জুন নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর ২০০০ সালের ১১ এপ্রিল এটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি বাক্স দিয়ে সুইমিংপুলের কূপে (বেসিন) ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় কাঠের বাক্স দিয়ে। এতে ঢালাই ভালোভাবে বিন্যস্ত (কমপ্যাক্ট) না হওয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে কূপে পানি তুলতে গেলে তা ফেটে যায়। এরপর ফাটল মেরামত ও সড়ক নির্মাণের জন্য ক্রীড়া পরিষদ পুনরায় ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই টাকা দিয়ে ফাটল মেরামত ও সড়ক নির্মাণের কাজ করা হয়। পরে কূপের ভেতরে টাইলস বসিয়ে পানি রোধ করার জন্য আরও ৫০ লাখ টাকার কাজ করা হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই কূপের পানি আটকানো যায়নি।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, পানি চোয়ানোর সমস্যার সমাধান না করেই ৪ লাখ ৩২ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতার কূপটিতে পানির সংস্থান করতে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি পানির পাম্প স্থাপন করা হয়। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওই পাম্প দুটিও কোনো কাজে আসেনি। ফলে পুরো টাকাই গচ্চা যায়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সুইমিংপুলটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। চারপাশে আগাছা। দেয়ালের পলেস্তারা খসে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। দেখে মনে হয়, অনেক বছরের পুরোনো কোনো স্থাপনা। ভেতরে পানির পাম্প দুটিও পরিত্যক্ত। চারপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও ঝোপঝাড়। কূপের বেশির ভাগ টাইলসই ময়লা-আবর্জনা জমে নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত সুইমিংপুলটি মাদকসেবীদের দখলে চলে যায়। অন্ধকারে গোটা এলাকা ভুতুড়ে থাকায় মাদকসেবীরা নির্বিঘ্নে মাদক সেবন করে। এলাকার পরিবেশ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পরিত্যক্ত সুইমিংপুলটির কারণে।

কথা হয় কয়েকজন ক্রীড়াবিদের সঙ্গেও। তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের একমাত্র সুইমিংপুলটি পরিত্যক্ত থাকায় সাঁতারুদের অনুশীলনে ভাটা পড়েছে। বিকল্প তেমন জায়গাও নেই। তার ওপর দিন দিন নগরে পুকুরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই সাঁতারুদের অনুশীলন কমে গেছে। তাঁদের প্রয়োজনেই সুইমিংপুলটি সংস্কার করে দ্রুত চালু করা দরকার।

সুইমিংপুলের অভাবে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে গত ২৭ আগস্ট ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতা শহরের ব্যাপ্টিস্ট মিশনের পুকুরে আয়োজন করতে হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৭০ জন অংশ নেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সুইমিংপুলটির বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। সংস্কার করলেও কোনো কাজে আসবে না। কারণ, এটির নির্মাণেই ত্রুটি ছিল। তিনি বলেন, ‘এখন এটি আমাদের জন্য বোঝা হয়ে গেছে। এটি ভেঙে ফেলা ছাড়া কোনো গতি নেই। বিষয়টি ক্রীড়া পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরা সরকারি কোনো স্থাপনা ভাঙতে হলে বিধান অনুযায়ী স্থাপনার মেয়াদ পূর্ণ হতে হয় বলে জানিয়েছেন। এখন আমরা (ক্রীড়া পরিষদ) কী করব বুঝতে পারছি না।’