উচ্ছেদের পরদিনই দোকান বসেছে ফুটপাতে

দেখে বোঝার উপায় নেই যে এক দিন আগেই গুলিস্তানের ফুটপাত ও সড়ক থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেখানে আবারও ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসেছে দোকান। গতকাল বেলা তিনটার পর গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণের সামনে থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
দেখে বোঝার উপায় নেই যে এক দিন আগেই গুলিস্তানের ফুটপাত ও সড়ক থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেখানে আবারও ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসেছে দোকান। গতকাল বেলা তিনটার পর গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণের সামনে থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

রাজধানীর গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযানের মাত্র ১৬ ঘণ্টা পর ফুটপাতে আবার অবৈধভাবে দোকানপাট বসেছে৷ এসব দোকান বসাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর দুটি অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে৷ হকাররা জানিয়েছেন, ফুটপাতে বসার বিনিময়ে প্রতি মাসে এই নেতাদের নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়৷

গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ সময় গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তর, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের চারপাশ থেকে পাঁচ শতাধিক অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। এই উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একদল যুবকের সঙ্গে হকার এবং পাতাল মার্কেটের দোকানিদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তখন গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফুটপাত ও রাস্তায় বসা হকারদের কাছ থেকে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বড় অঙ্কের চাঁদা পান। তাঁরাই ফুটপাতে হকার বসতে সহযোগিতা করেন। কোনো ব্যবসায়ী প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এদিকে আজ শনিবার দুপুরে নগর ভবনে ডিএসসিসি এলাকার সব ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করবেন মেয়র সাঈদ খোকন।

এদিকে হকারদের তুলে দেওয়াই একমাত্র সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। গতকাল রাজধানীর নভোথিয়েটারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, হকারদের উচ্ছেদ করতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। হকারদেরও জীবন আছে। এই আয়ে তাঁদের সংসার চলে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হকারদের উচ্ছেদ করা যাবে না।

গত ১০ ও ১১ জুন ঢাকা ট্রেড সেন্টারের চারপাশ থেকে ওই হকারদের উচ্ছেদ করতে চাইলে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীদের সঙ্গে হকারদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল। এতে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনারসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় প্রায় ১৫০ জন ব্যবসায়ী ও কর্মীকে আটক করে পুলিশ।

গতকাল বেলা দুইটায় সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তানের ওই মার্কেটগুলোর চারপাশের সড়ক ও ফুটপাতে মালামাল নিয়ে বসে রয়েছেন পাঁচ শতাধিক হকার। ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তর ও দক্ষিণের চারপাশে ফুটপাতের রেলিংয়ের ওপর শামিয়ানা টানানো রয়েছে। কয়েকজন হকার আগের দিনের ভাঙাচোরা আসবাব মেরামত করছেন। হকাররা কে কোথায় বসবেন, তা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন কয়েকজন ব্যক্তি। হকারদের দোকানের সীমানা অনুযায়ী চাঁদা আদায় করছেন তাঁরা। পুরোদমে বেচাকেনা চলছে। বেলা তিনটার দিকে চাঁদা আদায়কারী কয়েকজনকে গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের নিচতলায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের ২০ নম্বর ওয়ার্ড ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ২০ ওয়ার্ডের কার্যালয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তাঁদের কাছে এই সংগঠন দুটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মুঠোফোন নম্বর চাইলে অপরিচিত বলে এই প্রতিবেদককে তা দিতে রাজি হননি তাঁরা। এ ছাড়া গোলাপ শাহ মাজার এলাকা, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্স এলাকার ফুটপাতে আরও প্রায় এক হাজার হকারকে দেখা গেছে। এই এলাকাগুলোতে অভিযান চালানো হয়নি৷

ঢাকা ট্রেড সেন্টারের পূর্ব পাশের ফুটপাতে প্রায় দুই বছর ধরে জামা-কাপড় বিক্রি করেন আবদুল বাতেন ও শফিকুল ইসলাম। আলাপকালে তাঁরা বলেন, পুরো গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার ওপর প্রায় দেড় হাজার হকার বসেন। তাঁদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়, যা মাসিক ১ কোটি ৩৫ লাখে দাঁড়ায়। একই কথা বলেছেন গুলিস্তান ট্রেড শপিং কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাতে বসা হকার কাউছার আলম ও সুজন মোল্লা।

ঢাকা ট্রেড সেন্টার (উত্তর) মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা ও ঢাকা ট্রেড সেন্টার (দক্ষিণ) মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গুলিস্তানের প্রতিটি ফুটপাত থেকে মার্কেটের দ্বিতীয় তলা বরাবর শামিয়ানা টানিয়ে ব্যবসা করেন হকাররা। এতে বাইরে থেকে মার্কেট বোঝা যায় না, পরিবেশ নষ্ট হয়। এ ছাড়া এই অব্যবস্থাপনার কারণে দিনে দিনে গুলিস্তানের মার্কেটগুলোতে ক্রেতা কমে যাচ্ছে। তাঁরা বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাঁদের ফুটপাতে বসতে সহযোগিতা করছে একটি চক্র। এই চক্র কারা, তা তাঁরা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের কমিশনারের দায়িত্বে থাকা তারেক বিন রশিদ বলেন, পুলিশ টাকা নেয়, এটা কমন অভিযোগ। কিন্তু সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তবে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশের দায়ী সদস্যের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।