নেতাদের দখলে বিলবোর্ড, বিপাকে বিজ্ঞাপনী সংস্থা

বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকার প্রায় সব বিলবোর্ড বছরজুড়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা দখলে রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পণ্যের প্রচারণার বদলে তাতে টানানো থাকে নেতাদের শুভেচ্ছা-ছবিসহ ডিজিটাল ব্যানার। এতে বিপাকে পড়েছে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো।
বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো বলছে, বিলবোর্ডগুলো ভাড়া দেয় বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। তারাও বিলবোর্ড দখলের বিষয়ে কিছু বলছে না। এ কারণে এসব বিলবোর্ড ভাড়া নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো।
পৌরসভা সূত্র জানায়, বিলবোর্ড ভাড়া দিয়ে পৌরসভা বছরে প্রায় ২২ লাখ টাকা আয় করে। কিন্তু সাতমাথা এলাকার বিলবোর্ডে সারা বছর নেতারা বাণিজ্যিক পণ্যের বিজ্ঞাপন ঢেকে দিয়ে শুভেচ্ছা-অভিনন্দনের ব্যানার টানান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীর আগমন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সম্মেলন, পয়লা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষ, মে দিবসে, নেতাদের সমাজসেবায় পদক প্রাপ্তির শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয় এসব বিলবোর্ডে। এ কারণে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো সাতমাথায় আর বিলবোর্ড ভাড়া নিতে চাইছে না। সে রকম হলে পৌরসভা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
মুক্তি আর্ট নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার ব্যবস্থাপক নাজিহাতুল কারি বলেন, বিলবোর্ড ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিজ্ঞাপন নির্মাতা, শিল্পী-কলাকুশলী থেকে শুরু করে বহু মানুষের জীবিকা ও কর্মসংস্থান। কিন্তু উচ্ছেদ ও রাজনৈতিক দখলের কারণে এখন এ ব্যবসার অস্তিত্ব সংকটে। বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর কাছে বগুড়া শহরের সাতমাথায় বিলবোর্ডের চাহিদা ছিল অন্যরকম। মাঝারি মাপের একটি বিলবোর্ড বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকায় পর্যন্ত ভাড়া হতো। কিন্তু বছরজুড়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দখলের কারণে এখন পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য সাতমাথায় কেউ বিলবোর্ড ভাড়া নিতে চান না।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা নেপচুনের ব্যবস্থাপক এনায়েত হোসেন বলেন, নামী-দামি বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিলবোর্ড এখন আর সাতমাথায় নেই। দখলের কারণে সাতমাথার চেয়ে বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর বেশি পছন্দ এখন বগুড়ার বনানী ও মাটিডালি মোড়।
পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান বলেন, বাণিজ্যিক বিলবোর্ডগুলো বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার। পৌরসভা শুধু প্রতিবছর বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাছ থেকে বিলবোর্ডের নির্ধারিত ভাড়া আদায় করে। এখন এসব বিলবোর্ড পণ্যের বদলে যদি নেতাদের প্রচারণায় ব্যবহৃত হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব বিজ্ঞাপনী সংস্থার।
দলীয় ও পৌরসভা সূত্র জানায়, সাতমাথায় জিলা স্কুলের উত্তর ও পশ্চিম প্রাচীর ঘেঁষে, বাণিজ্যিক কলেজের সামনে, সপ্তপদী মার্কেটের ওপরে, ডাকঘরের সামনে, সমবায় ব্যাংক ভবনের পাশে ও ওপরে এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে বিভিন্ন কোম্পানির ছোট-বড় ৩২টি বিলবোর্ড রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ অক্টোবর জেলা যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে সব বিলবোর্ড দখলে নেন জেলা, শহর ও ওয়ার্ড যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বর্তমানে যুবলীগের দখলে ১৯টি বিলবোর্ড রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের দখলে আরও ৭টি বিলবোর্ড রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, সপ্তপদী মার্কেটের সামনে চারটি, দক্ষিণে চারটি, জিলা স্কুলের পশ্চিম প্রাচীর ঘেঁষে পাঁচটি, উত্তর প্রাচীরের পাশে দুটি, জেলা ডাকঘরের সামনে দুটি এবং সরকারি কলেজ ও শহীদ খোকন পার্কের সামনে একটি করে বিলবোর্ড যুবলীগের নেতাদের দখলে রয়েছে। জিলা স্কুলের উত্তর প্রাচীরের পাশে দুটি এবং সমবায় ব্যাংক ভবন ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনের একটি করে বিলবোর্ড আওয়ামী লীগের দখলে। এ ছাড়া জিলা স্কুলের উত্তর প্রাচীরের পাশে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলার মুখ নামের একটি সংগঠনের দখলে একটি করে বিলবোর্ড রয়েছে। বিলবোর্ডগুলোতে এসব দলের নেতাদের শুভেচ্ছাসহ ছবি শোভা পাচ্ছে।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলা সম্মেলন শেষ হওয়ার পর নেতা-কর্মীদের নিজ দায়িত্বে বিলবোর্ড থেকে ব্যানার খুলে নিতে বলা হয়েছিল। কিছু বিলবোর্ড থেকে ব্যানার সরিয়েও ফেলা হয়েছে। বাকি বিলবোর্ড থেকেও দলীয় ব্যানার সরিয়ে নেওয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান বলেন, একটার পর একটা দলীয় কর্মসূচি ও নানা দিবস আসে আর সাতমাথার বিলবোর্ড শুভেচ্ছা-অভিনন্দনের ব্যানারে ভরে যায়। এ কারণে প্রায় সারা বছরই এসব বিলবোর্ডে দলীয় নেতাদের ব্যানার শোভা পায়। বিএনপির সময়েও একই চিত্র ছিল। শহরের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এসব বিলবোর্ড দলীয় কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।