ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় পুলিশের!

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫৩ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ী আহসান হাবীব অভিযোগ করেছেন, চিরিরবন্দর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এই টাকা নিয়েছেন। তিনি দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

চিরিরবন্দর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ হোসেন বলেছেন, তিনি জুয়ার আসর থেকে ওই ব্যবসায়ী ও অন্যদের কাছে থেকে ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ‘উদ্ধার’ করেছেন।
আহসান হাবীব চিরিরবন্দরের বেলতলী বাজারে ধানের কুঁড়া ও রাইস ব্রানের ব্যবসা করেন। জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁর করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর রাত একটার দিকে চিরিরবন্দর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, কনস্টেবল মাহমুদসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য সাদাপোশাকে বেলতলী বাজারে যান। ঠাকুরগাঁও থেকে রাইস ব্রানের ট্রাকের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। পুলিশের দল আহসান হাবিবের দোকানের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে কয়েকজন শ্রমিকও ছিলেন।
আহসান হাবীবের অভিযোগ, পুলিশ সদস্যরা তাঁদের মোবাইলগুলো কেড়ে নেন। শরীর তল্লাশি করে ৩৭ হাজার টাকা নিয়ে নেন। চারজনের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়। জুয়া খেলাসহ তাঁদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে আটক ব্যক্তিরা তাঁদের ছেড়ে দিতে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানান। এ সময় এএসআই জাহিদ হোসেন তাঁদের কাছে নগদ দুই লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে ৫৩ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দিতে সম্মত হয়।
ব্যবসায়ী আহসান হাবীব বলেন, বিষয়টি তিনি চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিছুর রহমানকে জানান। তবে ওসি তাঁকে পাত্তা দেননি। পরে ২৭ অক্টোবর দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন জানান, ‘আহসান হাবীবসহ অন্যরা প্রতি রাতে ওই ঘরে জুয়া খেলতেন। আমরা তাঁদের আটক করেছিলাম সত্য, তবে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ৫৩ হাজার টাকা নয়, তবে সব মিলিয়ে ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হতে পারে। তবে তা জুয়ার টাকা। তাঁরা টাকা ফেরত চাইলে দেওয়া হবে।
ওসি মো. আনিছুর রহমান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেনসহ অন্যরা তাঁকে জানিয়েছেন, আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানে জুয়া খেলার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালায়। ওসি বলেন, ‘তারপরও অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এর সত্যতা প্রমাণিত হলে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম আজ রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যবসায়ীর লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসকের ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে জমা হয়েছে। হাতে এসে পৌঁছালে তিনি ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ জানাবেন।
পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলম বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী আহসান হাবীবের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনা তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।