প্রশাসন ও পুলিশের অবহেলায় নাসিরনগরে হামলা: মানবাধিকার কমিশন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ছিল সুপরিকল্পিত। একটি চক্রান্তকারী গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর দূরদর্শিতার অভাব, উদাসীনতা এবং অবহেলা এ হামলার সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং নাসিরনগর উপজেলার পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের অদূরদর্শিতার বিষয়ে তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সমাবেশের অনুমতি দিলেও প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না রাখায় এ হামলা ত্বরান্বিত হয়েছে।
গত রোববার নাসিরনগরে দুপুর ১২টার পর থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা ভাঙচুর-লুটপাটের সময় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে পিটিয়ে আহত করা হয়। উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণ বেড় গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উসকানিমূলক একটি ছবি পোস্ট করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন শুক্রবার তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এর জের ধরে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক কমিশনের সদস্য এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন কমিশনের পরিচালক শরীফউদ্দীন ও সহকারী পরিচালক জয়দেব চক্রবর্তী। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করেন। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান। এ সময় তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, জেঠাগ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসার মাওলানা নূর ইসলাম, দাঁত মণ্ডল গ্রামের তাজউদ্দিন আহম্মেদ, ছাফরতলা গ্রামের সবুজ হাজি, গৌর মন্দির এলাকার সাবেক মেম্বার ওলী ও খরক পাড়া গ্রামের ফারুক মোল্লা, পশ্চিম পাড়ার আবেদ আলীর ছেলে রহিমসহ অনেকে চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন সমাবেশে নাসিরনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি চিকিৎসক রাফি ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সরকার উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত মন্দিরে হামলার বিষয়টি সুপরিকল্পিত বলেই ইঙ্গিত দেয়। জেলেপাড়ার নিরক্ষর রসুরাজ দাসের ফেসবুকে পোস্ট করা ধর্মীয় অবমাননার ছবি তিনি নিজেই পোস্ট করেছেন বলে তথ্যানুসন্ধানকারী দলের কাছে মনে হয়নি। অসহায় ও দরিদ্র হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর এ ধরনের বীভৎস হামলা মানবাধিকারের গভীর লঙ্ঘন।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, সন্দেহভাজন অপরাধীরা রাজনৈতিক যে দলের সদস্যই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।