মৃত ব্যক্তির কাছে চাল বিক্রি, একই নামে একাধিক কার্ড!

মারা গেছেন বহু আগে। কিন্তু তাঁর নামে বরাদ্দ কার্ডে দুই দফা চাল বিক্রি হয়েছে। আবার একই ব্যক্তির নামে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার রাউতি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে এমন অভিযোগ উঠেছে।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের হরিগাতি গ্রামেরসরষা বানু প্রায় ১০ মাস আগে মারা গেছেন। কিন্তু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় তাঁর নাম (কার্ড নম্বর-৪৫৩) রয়েছে। ওই কার্ডে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি দেখিয়েছেন স্থানীয় ডিলার মো. বকুল মিয়া।

        সরষা বানুর ছেলে আবু তাহের বলেন, ‘আমার মা মারা গেছেন ১০ মাস আগে। তাঁর নামে কীভাবে কার্ড হয়েছে, সেই কার্ড দিয়ে কারা চাল তুলছে তা আমরা জানি না।’

এ ছাড়া তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার এসেছে, এমন অন্তত তিনটি ঘটনা পাওয়া গেছে। মোড়ারকান্দি গ্রামের আবু ছিদ্দিকের স্ত্রী রাহিমা খাতুনের নামে তিনটি কার্ড (নম্বর-৬৮, ১৪৮ ও ৪০২) করা হয়েছে। মৌগাঁও গ্রামের কুদরত আলীর স্ত্রী মোছা. বিউটিও মেছগাঁও গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে রেনু মিয়ার নামে দুটি করে কার্ড করা হয়েছে। মোছা. বিউটির নামে করা কার্ডের নম্বর ২৫ ও ২৪৪ এবং রেনু মিয়ার কার্ড নম্বর ৩৮৮ ও ৫৫৯। এই সাতটি কার্ডে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ২১০ কেজি চাল বিক্রি দেখানো হয়েছে। কিন্তু রাহিমা খাতুন, মোছা. বিউটি ও রেনু মিয়া বলেন, তাঁরা প্রত্যেকে দুবারে ৬০ কেজি করে চাল কিনেছেন। তাঁদের নামে একাধিক কার্ড করার বিষয়টি তাঁরা জানেন না।

দায়সারা বক্তব্য দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন রাউতি ইউপির চেয়ারম্যান মো. শরীফ উদ্দিন ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির স্থানীয় ডিলার মো. বকুল মিয়া। চেয়ারম্যান শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের কথা মেনে কাজ করতে হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নাম দিয়েছেন। এ কারণে একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

স্থানীয় ডিলার ও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি মো. বকুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে যারা কার্ড নিয়ে আসে তাদের চাল দিই। সবাইকে চেনা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’

এসব অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে রাউতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন গত ১ নভেম্বর তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা আক্তারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ইউএনও সুলতানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার আগ পর্যন্ত ওই কার্ডগুলোর বিপরীতে চাল দিতে নিষেধ করা হয়েছে।