চলনবিলের খালে বাঁধ হুমকিতে শস্য আবাদ

সিরাজগঞ্জে তাড়াশ উপজেলায় চলনবিলের কাটাবাড়ি খালে আড়াআড়ি বাঁশ পুঁতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। ফলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আশপাশের নয়টি উপজেলার প্রায় দুই লাখ হেক্টরে রবিশস্য আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।

কৃষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ওই কাজে জড়িত থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র জানায়, চলনবিল এলাকায় বন্যাসহ অতিরিক্তপানি নামার একমাত্র পথ তাড়াশের কাটাবাড়ি খাল। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের তাড়াশের কুন্দইল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার এলাকা, মাটি ফাউস, গোবর জঙ্গল, চরকুশাবাড়ি, ভেটুয়া, বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ৮ ও ৯ নম্বর সেতুর উত্তর পাশসহ প্রায় ৫০টি এলাকায় বাঁশ পুঁতে সোঁতি জাল বাঁশের সঙ্গে বেঁধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ফলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত সোঁতি জালে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ায় মাছের বংশ সমূলে ধ্বংস হচ্ছে।

সম্প্রতি কুন্দইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাটাবাড়ি খালে আড়াআড়িভাবে বাঁশ পুঁতে সোঁতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এর উজানে ও ভাটিতে একইভাবে আরও ১০টি জাল বসানো হয়েছে।

কয়েকজন কৃষক বলেন, কুন্দইল ইউনিয়নযুবলীগের নেতা আরিফুল ইসলাম সোঁতি জাল দিয়ে মাছ ধরার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের সাহায্যার্থে মাছ ধরা হচ্ছে। মাছ না ধরলে অন্য স্থানে চলে যাবে। ফলে আমরা বঞ্চিত হব। তা ছাড়া প্রতিবছরই বিলে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এবার কয়েক দফা বৃদ্ধির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকছে।’

সগুনা এলাকার আশরাফুল ইসলাম ও আবদুল হালিম মণ্ডল বলেন, চলনবিল এলাকার কৃষকদের জীবিকা আবাদের ওপর নির্ভরশীল।

অক্টোবরের মধ্যে সরিষা বপন করতে হয়। কিন্তু বেড়ার কারণে পানি কমছে না। প্রায় আট শ হেক্টর জমি এখনো পানির নিচে।

সগুনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও তাড়াশ উপজেলাআওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ হেল-বাকী বলেন, ‘আশপাশের উপজেলায়ও সোঁতি জাল বসানো হয়েছে। শুধু আমাদের এলাকায় লোকজন নানা কথা বলছে। পানি আশপাশ দিয়ে বের হচ্ছে। আবাদ সামান্য দেরি হলেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, চলনবিল নয়টি উপজেলাজুড়ে। এগুলো হলো সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ, নাটোরের সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর এবং পাবনার চাটমোহর ও ফরিদপুর। বিলের প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। এ ছাড়া ৫৭৬ হেক্টরে রসুন ও দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়। সোঁতি জাল স্থাপন করায় পানির প্রবাহ কমে এসব রবিশস্যের আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, সোঁতি জালে ছোট-বড় সব মাছ ধরা পড়ছে। এগুলো না ধরলে উৎপাদন বাড়ত। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিল্লুর রহমান খান বলেন, এর আগে বেশ কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে সোঁতি জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাঁশ উপড়ে ফেলা হয়েছে। লোকবলের অভাবে সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। দু-এক দিনের মধ্যে নতুন করে অভিযান শুরু করা হবে।