লোকবল-সংকটে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত

অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ প্রায় তিন বছর। আড়াই বছর ধরে নেই অবেদনবিদ। গাইনি চিকিৎসকের পদটি খালি। চক্ষু চিকিৎসক নেই। নাক-কান-গলার চিকিৎসক বদলি হয়ে গেছেন, এখনো পদ খালি। এটি ঢাকার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান চিত্র।

উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম, নৈশপ্রহরী নেই, ক্লিনার ও নার্সের পদ খালি। ২৭ চিকিৎসকের ১৫ জনই ঢাকা থেকে হাসপাতালে যান। প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ২০০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ভবনের দোতলায় তালাবদ্ধ অস্ত্রোপচার কক্ষ। অবেদনবিদ না থাকায় অস্ত্রোপচার বন্ধ। অস্ত্রোপচার কক্ষের উল্টো দিকে গাইনি চিকিৎসকের কক্ষটিও তালা দেওয়া। গাইনি চিকিৎসক বদলি হয়েছেন এক মাস।

হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। তিনি বদলি হয়েছেন প্রায় এক মাস। চোখের চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন ৬০ বছর বয়সী সুফিয়া বেগম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি জানতে পারেন চোখের চিকিৎসক নেই। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞও বদলি হয়েছেন। নাক-কান-গলার রোগীরা আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক কিছু পরামর্শ পান কিন্তু সেবা পান না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জসিমউদ্দিন বলেন, অনুমোদিত অবেদনবিদ নেই, তাই অস্ত্রোপচার বন্ধ। মাঝেমধ্যে কিছু অস্ত্রোপচার হয়। গাইনি চিকিৎসক বদলি হয়েছেন। অনেকবার লোক চাওয়া হলেও কাজ হয় না।

ঢাকায় থেকে যাতায়াতের কারণ হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন তারেক ইমতিয়াজ বলেন, ‘নিজের গাড়ি আছে, যাতায়াত করতে খুব বেশি সময় লাগে না। উপজেলা পর্যায়ে তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন না থাকায় ঢাকায় থাকি।’ চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বলেন, ‘জাতীয় সংসদে প্রেষণে (ডেপুটেশনে) ছিলাম। যার কারণে ঢাকায় থাকি। ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকি।’

মো. জসিমউদ্দিন বলেন, দোহারে থাকার মতো পরিবেশ নেই। একজন চিকিৎসক হাসপাতালের বাইরে থাকলে তাঁকে নিরাপত্তা কে দেবে। আবাসন সুবিধা না থাকায় চিকিৎসকেরা ঢাকা থেকে যাতায়াত করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক এস কে ইয়াহিয়া মাহমুদ খান বলেন, এটি ৫১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ জনের মতো রোগী ভর্তি থাকেন। লোকবল-সংকটের কারণে একটু সমস্যা হয়।

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা বলেন, অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লোকবল-সংকট আছে। আস্তে আস্তে লোক দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই উপজেলা পর্যায়ে থাকতে চান না, এ জন্য এমন সংকট তৈরি হয়।