আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য আরও পাঁচ বিমা

‘নির্বাচনকালীন সরকার’ এখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নতুন বিমা লাইসেন্সও দিচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে নতুন করে পাঁচটি জীবনবিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।
সাড়ে পাঁচ মাস আগে দলের নেতাদের আরও ১১টি বিমার লাইসেন্স দিয়েছিল সরকার। এখন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে আগ্রহী অন্য নেতাদের। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নিজের নামেই নিচ্ছেন, আর কেউ কেউ বেনামে আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য কার সুপারিশে, কাকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, এ বিষয়ক একটি তালিকা তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কোম্পানিগুলো হচ্ছে, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, আলফা ইসলামী লাইফ, স্বদেশ লাইফ ইনস্যুরেন্স, ডায়মন্ড লাইফ ও যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
তালিকা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সুপারিশে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা জাকের আহমেদ ভূঁইয়াকে।
যোগাযোগ করলে মাহবুব উল আলম হানিফ সুপারিশ করার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, লক্ষ্মীপুর থানা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তাঁর কাছে দাবি নিয়ে এসেছিলেন। তাই তিনি সুপারিশটি করেছেন। এতে তিনি অন্যায়ের কিছু দেখছেন না বলে জানান।
আলফা ইসলামী লাইফের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে নাজিমউদ্দিন আহমেদ নামের এক তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীকে। এ জন্য সুপারিশ করেছেন রাজশাহী-৬ আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলম।
ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নাকে। যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের লাইসেন্স পাচ্ছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওয়ামী লীগের সাংসদ মোশাররফ হোসেন। এ জন্য সুপারিশ করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে ভৈরবের সাংসদ নাজমুল হাসান। এ ছাড়া স্বদেশ লাইফের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীকে।
ইসহাক আলী খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। লাইসেন্স পেলে তিনি এ খাতে আরও বিনিয়োগ করবেন।
বিমা খাতের লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ারধারী সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নিজে এ লাইসেন্স দেওয়ার বিপক্ষে বলে এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে পাঠানো একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল। কিন্তু সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য ভবিষ্যতে নিয়মিত সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য সংস্থাটি অপেক্ষা করতে পারছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইডিআরএর সূত্র প্রথম আলোকে গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ সময়ে কেন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সচিবালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, আরও কয়েকটি জীবন বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। অনেক আগেই আইডিআরএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইডিআরএ কিছু সময় নিয়েছে।’
আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদ, তাঁর চার সদস্যের সঙ্গে আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকের পর পাঁচ কোম্পানির চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠাবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শেফাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর সেবার মান বাড়তে পারে বিবেচনায় নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।
৪২টি সাধারণ বিমা, ১৭টি জীবন বিমা, একটি বিদেশি জীবন বিমা মেটলাইফ অ্যালিকো এবং সরকারি সংস্থা সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন নিয়ে ছিল দেশের বিমা খাত। আগেরবারের আওয়ামী লীগ আমলে লাইসেন্স পাওয়া এগুলোর বেশির ভাগেরই অবস্থা ততটা ভালো নয়।
গত জুলাইয়ে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফরিদুন্নাহার লাইলী, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা মো. নাসির উদ্দিন, আগেরবারের আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক, কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আহাদ, মিরপুরের সাংসদ আসলামুল হককে একটি করেসহ মোট ১১টি বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেয় মহাজোট সরকার। এগুলোর বেশির ভাগই কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।