গাড়ির স্টিয়ারিং ছেড়ে রান্না

বরিশাল-ঢাকা পথের হানিফ পরিবহনের গাড়িচালক আবদুল কুদ্দুস। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের টানা অবরোধ কর্মসূচির কারণে এখন বাস চালাতে পারছেন না তিনি।
অথচ এ কর্মসূচির আগে দম ফেলার সময় ছিল না তাঁর। বাস চালাতে না পারায় স্টিয়ারিং ছেড়ে তিনি এখন শ্রমিকদের জন্য রান্নাবান্নার কাজ করছেন। কম খরচে তাঁদের খাবার সরবরাহ এবং নিজের সংসার চালানোর জন্য তিনি এ কাজ করছেন।
অবরোধের কারণে আবদুল কুদ্দুসের মতো বরিশালের কয়েক হাজার পরিবহনশ্রমিকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন। অবসর কাটানোর জন্য অনেকে তাস খেলছেন। কেউ কেউ শ্রমিকদের কম দামে খাবার সরবরাহের জন্য অস্থায়ী হোটেল খুলে বসেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব বাসের কাউন্টার বন্ধ। টার্মিনালের চারদিকে এবং মূল সড়কের পাশে কয়েক শ গাড়ি দাঁড় করানো। টার্মিনালের ভেতরে শ্রমিকেরা দল বেঁধে তাস খেলছেন।
একপাশে ভাত রান্না করছেন একজন। এখানে কথা হয় পরিবহনশ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে। কেউ কেউ সাংবাদিক পরিচয় জেনে কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, ‘এমনিতেই প্যাটে ভাত নাই। হ্যারপর আবার কথা কইয়া মাইর খামু ?’ তাঁদের একজন বলেন, ‘গাড়ি চললে তো দুই পয়সা আয় হইত। এ্যাহন তো সব পথ বন্ধ। আয়ও নাই বাড়িও যাই না। টার্মিনালেই পইর্যা থাহি।’
সাকুরা পরিবহনের বাসচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তো এখন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় থাকার কথা ছিল। গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার পরও গাড়ি পাহারা দিচ্ছি। সময় কাটানোর জন্য তাস খেলছি।’
হাবিবুর রহমান টার্মিনালের যে জায়গায় বসে কথা বলছিলেন তাঁর পাশেই ভাত রান্না করছিলেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের সময় এই এলাকার দোকানপাট বন্ধ থাকে। এ সময় শ্রমিকেরা না খেয়ে থাকে। তাই শ্রমিকদের জন্য কম খরচে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
নাজ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান জানান, বারবার অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শ্রমিকদের। গাড়ি চললেই কেবল তাঁদের আয় হয়। গাড়ি বন্ধ থাকলে মালিকেরা খোরাকি (খাবার খরচ) দেন না। শ্রমিকদের তো বিকল্প কাজও নেই। টার্মিনালেই সময় কাটায় সবাই।
গাড়িচালক লাভলু শেখ জানান, গাড়ি বন্ধ থাকায় চালক ও তাঁর সহকারীদের কোনো কাজ নেই। অনেকের খাবারের টাকাও থাকে না। সবাই অলস সময় কাটাচ্ছেন। কম দামে খাবার সরবরাহ করার জন্য তাঁদের মধ্যে একজন গাড়িচালক রান্নাবান্না করেন।
বৃহত্তর বরিশাল-ফরিদপুর অঞ্চলের শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, হরতাল-অবরোধে গাড়ি না চললেও শ্রমিকদের গাড়ি পাহারা দিতে হয়। সে জন্য সারা দিনই শ্রমিকেরা টার্মিনাল এলাকায় থাকেন। কিছু মালিক শ্রমিকদের দিনে ১০০ টাকা মজুরি দেন। তবে অধিকাংশ মালিকই দেন না।
বরিশাল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সরদার প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল-অবরোধে শ্রমিকদের অন্য কিছু করার উপায় নেই। লাগাতার হরতালের অবসান হওয়া জরুরি। পেটে ভাত না থাকলে শ্রমিকেরা অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়তে পারেন।