জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে চায় অর্থ ও আশরাফুল

মায়ের কোলে করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিতে এসেছে অর্থ সিংহ। মায়ের সঙ্গে এসেছে আশরাফুলও। চট্টগ্রামের পটিয়ার মুকুটনাইট আনছুর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
মায়ের কোলে করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিতে এসেছে অর্থ সিংহ। মায়ের সঙ্গে এসেছে আশরাফুলও। চট্টগ্রামের পটিয়ার মুকুটনাইট আনছুর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

জন্মের পর থেকেই পায়ে জোর নেই অর্থ সিংহের। মায়ের কোলে চড়েই বিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু তার। হাতে জোর নেই বলে পরীক্ষার সময় একজন শ্রুতলেখকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাতে-পায়ে জোর না থাকলেও পড়াশোনা করে জীবনে অনেক দূর যেতে চায় অর্থ। মায়ের কোলে চেপে ১১ বছরের এই কিশোর এবার অংশ নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার যুদ্ধে।
অর্থ সিংহ পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের গৈড়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অর্থের মতো জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী আরেক কিশোর আশরাফুল ইসলামও। একই বিদ্যালয়ের ছাত্র আশরাফুলও এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
দুজনের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে পটিয়ার মুকুটনাইট আনছুর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গতকাল সোমবার পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা মিলল এ দুই অদম্য কিশোরের। পরীক্ষাকেন্দ্রে সন্তানকে বসিয়ে দিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন অর্থ সিংহের মা চুমকি সিংহ।
চুমকি সিংহ বলেন, জন্মের পর থেকে অর্থের এই শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসার পরও সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। তবে হাতে-পায়ে জোর না থাকলেও অর্থের মনের জোর অনেক। পড়াশোনার প্রতিও তার অনেক আগ্রহ। তাঁর আশা ছেলে একদিন অনেক বড় হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।
অপর দিকে আশরাফুলের মা শাহনাজ বেগমও সন্তানকে ঘিরে একই স্বপ্ন দেখেন। আশরাফুলের ডান হাত ও ডান পা জন্ম থেকে বাঁকা। তার শ্রুতলেখকের প্রয়োজন পড়ে না। তবে বাঁ হাতেও শক্তি কম থাকায় লেখার গতি খুব ধীর।
পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর কথা হয় অর্থ ও আশরাফুলের সঙ্গে। অর্থ সিংহ প্রথম আলোকে বলে, ‘বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চাই। মা ও বিদ্যালয়ের সবাই খুব উৎসাহ দেন।’
আশরাফুল ভবিষ্যতে ব্যবসায়ী হতে চায়। প্রথম আলোকে সে বলে, ‘হাত-পা বাঁকা বলে অনেক সময় বন্ধুরা হাসাহাসি করে। খুব কষ্ট লাগে তখন।’
গৈড়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন বলেন, পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহ আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও তাদের প্রতি যত্নশীল।
পটিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহের বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবন্ধী শব্দটি না বলে তাদের দুজনকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলাই ভালো। নিয়ম অনুযায়ী, দুজনকেই অন্য শিশুদের তুলনায় অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে।