'সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাই দুর্নীতির মূল'

সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন বা বিবেচনামূলক ক্ষমতাই দুর্নীতির মূল। তাই এ ক্ষমতা সীমিত করে দেওয়া উচিত। এমনটাই মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ‘দুর্নীতি ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। একসময়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বর্তমানে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার কথা, কিন্তু তাঁরা প্রভু হতে বেশি পছন্দ করেন। অনেকেই রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়েছেন। কেউ কেউ চাকরি পাওয়ার পরই দোকান খুলে বসেন। জনগণকে খরিদ্দার বিবেচনা করে অর্থের বিনিময়ে সেবা দিতে চান, আর বেতনটাকে চাকরির প্রাপ্তি মনে করেন। এ অবস্থার জন্য সরকারি পদ্ধতি দায়ী। তাই সরকারি কার্যক্রমের পদ্ধতি পরিবর্তন জরুরি।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বপ্ন দেখাবে আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন। যদি সরকারি কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকে, তবে রাজনৈতিক নেতাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কী হচ্ছে, তা আমাদের বলতে হবে। দেশে বিদ্যালয় ভবন আছে, শ্রেণিকক্ষ আছে, খেলার মাঠ আছে, শিক্ষা উপকরণ আছে, শিক্ষক আছেন, ছাত্র-ছাত্রী আছে কিন্তু শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা আছে কি? সে প্রশ্ন অনেকের মতো আমার মনেও জেগেছে। অনেকেই বলেন শিক্ষা নেই।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, শিক্ষালয়ে জনসম্পদ তৈরি হবে, নাকি জন-আপদ তৈরি হবে?

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ভয় দিয়ে মানুষের হৃদয়কে যেমন জয় করা যায় না, তেমনি দুর্নীতিকেও দমন করা যায় না। দুর্নীতি দমন করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তাদের হৃদয় জয় করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি খাতেই দুর্নীতি রয়েছে। ব্যাংক থেকে শুধু বিশ্বাসের ওপর সহায়ক জামানত না রেখেই ঋণ দেওয়া হলো অথবা নেওয়া হলো। তারপর যথারীতি যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়া হলো তা না করে অন্য নামে গাড়ি-বাড়ি তৈরি করা হলো। ঋণটি কুঋণে পরিণত হলো। অর্থঋণ আদালতে মামলা হলো। একসময় ব্যাংকের ব্যালেন্স সিট থেকে ওই ঋণ উধাও হয়ে গেল। আদালতে মামলা চলতে থাকল। একসময় ঋণটি অবলোপন করা হলো। এ প্রক্রিয়া কি দুর্নীতি নয়?

রাজনীতিবিদদের সম্পদ বৃদ্ধিসংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার আহ্বান হলো, আইনের প্রয়োগ নয়, আমরা সবাই আইন মেনে চলি। পদ্ধতির উন্নয়ন করি এবং তা মেনে চলি। তাহলে দুর্নীতির প্রকোপ কমে আসবে।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পায়। ফলে উৎপাদন, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং আইনের শাসন নিম্নগামী হয়।’

ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নাজমুল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন।