নূর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না র‍্যাব সদস্যদের

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি র‍্যাবের সাবেক কর্মকর্তা মেজর (বরখাস্ত) আরিফ হোসেনের আইনজীবী দাবি করেছেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার করা র‍্যাবের কোনো সদস্যের সঙ্গে প্রধান আসামি নূর হোসেনের যোগাযোগ ছিল না এবং তাঁরা হত্যাকাণ্ডটি ঘটাননি। গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে তিনি এ দাবি করেন।
গতকাল আদালতের কার্যক্রম সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত চলে। গত সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে ১৫ জন আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাঁদের আইনজীবীরা। এ মামলায় আসামি ৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে র‍্যাবের আটজনসহ ১২ জন পলাতক। গতকাল আরিফ হোসেনের আইনজীবী এম এ রশিদ ভূঁইয়ার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় ২৭ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।
এ মামলায় কারাগারে থাকা নূর হোসেন, র‍্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল (বরখাস্ত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (বরখাস্ত) এম এম রানাসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। কার্যক্রমের শুরুতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন র‍্যাবের পলাতক ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিনের আইনজীবী শামসুল হক তরফদার। তিনি আদালতকে বলেন, রুহুল আমিন গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন বলেই তিনি ছয় সদস্যের একটি দল নিয়ে বেরিয়েছিলেন। অপহরণ, খুন ও গুমের সহায়তাকারী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ঠিক নয়।
এরপর এম এ রশিদ ভূঁইয়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি আদালতকে বলেন, অভিযোগপত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং নিহত কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর দাবি করেছেন, নূর হোসেনের টাকা খেয়ে র‍্যাব সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু জেরা চলাকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা এই লেনদেনের পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ দেখাতে পারেননি। কোনো আসামিও বক্তব্যে বলেননি যে নূর হোসেন র‍্যাব সদস্যদের অর্থায়ন করেছেন।
আরিফ হোসেনের আইনজীবী দাবি করেন, এই কাঠগড়ায় র‍্যাবের যাঁরা আছেন, তাঁদের কারও সঙ্গেই নূর হোসেনের কোনো যোগাযোগ ছিল না এবং তাঁরা কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটাননি। আসামিদের আইনবহির্ভূতভাবে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৫(৪) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা (সন্দেহভাজন) অনুযায়ী কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করলে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া যাবে না। এই মর্মে হাইকোর্টের রুলও রয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণভাবে আইনবহির্ভূত।
আরিফ হোসেনের আইনজীবী বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা আট থেকে নয় মাস ধরে তদন্ত করেছেন। অথচ এই সময়ের মধ্যে যে ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে লাশ তুলে নিয়ে নদীতে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারেননি। একইভাবে ঘটনাস্থলের আশপাশে যেসব স্থাপনা রয়েছে, সেসব স্থাপনার কারও সাক্ষ্যও নিতে পারেননি।
এম এ রশিদ ভূঁইয়া বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলের যে স্কেচ এঁকেছেন, সেখানে তিনি নারায়ণগঞ্জ স্টেডিয়ামটিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পূর্ব দিকে দেখিয়েছেন। কিন্তু স্টেডিয়ামটি আসলে পশ্চিম দিকে। তাই ঘটনাস্থলের সাক্ষী হিসেবে তিনি যাঁদের সাক্ষ্য নিয়েছেন, তাঁদের কারও বক্তব্য সঠিক নয়।
সোমবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী বলেছিলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি নূর হোসেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর গাড়িচালক জাহাঙ্গীরসহ অন্যদের র‍্যাব সদস্যদের দিয়ে পূর্বশত্রুতা থাকার কারণে অপহরণ করে নিয়ে যান। অপহরণের পেছনে নূর হোসেনের পূর্বপরিকল্পনা ছিল এবং এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট তিনিই দিয়েছেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ডটা র‍্যাব সদস্যরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়।