রমনা রেসকোর্স থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

পুরোনো ছবি। ছবি: হাসান রাজা
পুরোনো ছবি। ছবি: হাসান রাজা

রমনা রেসকোর্স ময়দানের ১৮৯০ সালের একটি পুরোনো ছবি পাওয়া গেল ব্রিটিশ লাইব্রেরির ওয়েবসাইটসহ ঢাকার পুরোনো ছবির অনেকগুলো সাইটে। ঢাকাবিষয়ক কয়েকটি বইয়েও ছবিটি আছে। অবশ্য রমনা রেসকোর্স বললে এই প্রজন্মের অনেকে জায়গাটি খুঁজে না-ও পেতে পারেন। ব্রিটিশ আমলে প্রতি রোববার এখানে বৈধ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। তবে এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামেই সবাই জায়গাটি চেনে। জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ১৬১০ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সুবাদার ইসলাম খান ঢাকা নগরী প্রতিষ্ঠা করলে রমনার ইতিহাস শুরু হয়। তবে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর রমনা ধীরে ধীরে তার পুরোনো গৌরব হারিয়ে ফেলে। ১৮২৫ সালে ব্রিটিশ কালেক্টর ডয়েস এখানকার জঙ্গল পরিষ্কার করে রমনাকে পরিচ্ছন্ন রূপ দিয়ে নাম দেন রমনা গ্রিন। ওই সময়ে রেসকোর্স হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাঠের বেড়া দিয়ে তিনি জায়গাটি ঘিরে দেন। এরপর নবাবদের আনুকূল্যে সেখানে ঘোড়দৌড় খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নবাবেরা আরও সুন্দর বাগান করে নাম দেন ‘শাহবাগ’ বা রাজকীয় বাগান। ১৮৫১ সালে রেসকোর্সের উত্তর কোণে ব্রিটিশ আমলারা ঢাকা ক্লাব স্থাপন করেন। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের শাসনামলে গভর্নরের সরকারি বাসভবন স্থাপনের জন্য রমনাকে নির্বাচন করা হয়। বৃহত্তর রমনা এলাকায় ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এখানকার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্তি পেলে রমনা রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রমনা রেসকোর্স ময়দানে মহাসমাবেশের আয়োজন করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ১৬ ডিসেম্বর এখানেই হানাদার পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ এখানে আরেক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বক্তব্য দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংক্রান্ত যেসব ঐতিহাসিক ঘটনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালে এখানে ‘শিখা চিরন্তন’ স্থাপন করা হয়। হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল যেখানে স্বাক্ষর হয়েছিল, সেখানে গড়া হয়েছে স্বাধীনতাস্তম্ভ। সব মিলিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এই ভূখণ্ডের বহু ইতিহাসের সাক্ষী।

বর্তমান ছবি। ছবি: হাসান রাজা
বর্তমান ছবি। ছবি: হাসান রাজা