৫ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সরকারি খালের মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সরকারি খালের মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ-মান্নাননগর ওয়াপদা বাঁধ ও তাড়াশ-মহিশলুটি সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সরকারি খালের মুখ বিভিন্ন স্থানে বন্ধ করে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে। এতে এখনো ওই এলাকার জমি থেকে বন্যার পানি নামতে পারেনি। এদিকে রবিশস্য আবাদের মৌসুম শেষের পথে। কিন্তু জলাবদ্ধতায় এলাকার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির রবিশস্যের আবাদ বন্ধ হয়ে আছে।
কৃষকেরা অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে গত ১৯ নভেম্বর অভিযোগ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় কৃষক আবদুর রাজ্জাক, ময়েন উদ্দীন ও আজম মিয়া অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান মনসুর আলী, নঈম উদ্দীনসহ কয়েকজন তাড়াশ-মান্নাননগর ওয়াপদা বাঁধ এলাকার শ্মশানঘাট নামক স্থানে তিনটি এবং তাড়াশ-মহিশলুটি সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া খালের খুটিগাছা ও উলিপুর এলাকায় আবদুল সরকার, আমজাদ আলী, তাহেজ মিয়াসহ কয়েকজন মিলে পাঁচটি—মোট আটটি পুকুর খনন করা হয়েছে। নিজেদের জমির সঙ্গে খালের সরকারি জমি মিলিয়ে দিয়ে এসব পুকুর খনন করা হয়েছে। সারা বছরই এতে পানি বের হওয়ার মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রবিশস্য আবাদের জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ১৯ নভেম্বর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়, লিখিত অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই পুকুরগুলো খনন করায় সদর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ চলনবিলের একটি অংশের প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। রবি মৌসুম শেষ হতে চললেও জমিগুলো এখনো আবাদের উপযোগী হয়নি। বর্তমানে এই জমিগুলোতে এক থেকে দেড় ফুট পানি রয়েছে। এই এলাকায় চার হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা, পাঁচশত হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও পাঁচশত হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়ে থাকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘উপজেলার মোট উৎপাদিত সরিষা, গম ও ভুট্টার সিংহভাগ এই এলাকা থেকে আসে। রবিশস্যের প্রকৃত মৌসুম অক্টোবর মাস হলেও এখন পর্যন্ত এক শতক জমিতেও সরিষা, গম বা ভুট্টা আবাদ করা সম্ভব হয়নি। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে পানি নেমে যেত, তাহলে দেরিতে হলেও আবাদ হতো। বিষয়টি আমি নিজেও ইউএনওকে জানিয়েছি।’

পুকুর খননকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মনসুর আলী বলেন, তিনি নিজের জায়গায় পুকুর কেটেছেন। সরকারি খালের জায়গা তিনি দখল করেননি।

গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে কথা হয় পুকুর খননকারী উপজেলা সদরের আবু তাহেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেকেই খাল দখল করে পুকুর খনন করায় আমিও করেছি। পানিপ্রবাহে বাধা হবে প্রথমে বুঝতে পারিনি। এখন উপজেলা প্রশাসন থেকে পানিপ্রবাহের বিষয়টি বলা হওয়ায় আপাতত একটি পাইপ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই পানি চলে যাবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনো অনেক জমিতে ছয় ইঞ্চি থেকে এক ফুট পানি রয়েছে। পানি নেমে না যাওয়ায় এবার তাড়াশে তিন হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ কম হবে। মৌসুম চলে যাওয়ায় এখন আর সরিষা বপন করা সম্ভব নয়।

ইউএনও জিল্লুর রহমান খান বলেন, দুই দিন আগে দুটি পুকুর কেটে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ নিয়ে এসব স্থানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।