নরসিংদীতে আইয়ুব হত্যা মামলায় ছয়জনের ফাঁসি

নরসিংদীতে বরফকলের শ্রমিক আইয়ুব মিয়া (২৮) হত্যা মামলায় ছয়জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নরসিংদীর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শাহীন উদ্দিন এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনই পলাতক।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন নরসিংদী পৌর শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়া মহল্লার সোহাগ চন্দ্র দাস (২০), বৌয়াকুড় মহল্লার সাদ্দাম হোসেন (২০), সমীর চন্দ্র দাস (২৭), বিমল (২৪), ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামনাথপুর দক্ষিণপাড়ার সুজন ওরফে বাঘা সুজন (২০) ও চাঁদপুরের মতলব উপজেলার আম্মাকান্দা গ্রামের এরশাদ মিয়া (২১)।
আদালত সূত্র জানায়, আইয়ুব মিয়ার বাড়ি নরসিংদী পৌর শহরের বানিয়াছল মহল্লায়। তাঁকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আইয়ুব সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কবির আহমেদের মালিকানাধীন বৌয়াকুড় মহল্লার একটি বরফকলে কাজ করতেন। দণ্ডপ্রাপ্ত সুজন আইয়ুবের বন্ধু ছিলেন। সুজনও ওই বরফকলের শ্রমিক ছিলেন। একপর্যায়ে মালিকপক্ষ সুজনকে চাকরিচ্যুত করে। এরপর ওই পদে সুজনের বন্ধু আইয়ুবকে চাকরি দেওয়া হয়। এতে সুজন ক্ষিপ্ত হন। ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট মালিকের বাড়িতে দাওয়াতে যাওয়ার কথা বলে মুঠোফোনে কল করে আইয়ুবকে নিয়ে যান সুজন। পরে অন্য বন্ধুদের সহযোগিতায় তাঁকে হত্যা করেন তিনি। তিন দিন পর ১ সেপ্টেম্বর মেঘনা নদীর সদর উপজেলার দামের ভাওলা এলাকা থেকে আইয়ুবের ভাসমান লাশ উদ্ধার হয়। ওই দিনই আইয়ুবের বাবা মো. হেকিম সরকার নরসিংদী সদর মডেল থানায় সুজনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন।
পুলিশ প্রথমে সুজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয় সোহাগ, সাদ্দাম ও সমিরকে। পরে এ চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, প্রত্যেকে আইয়ুবের বন্ধু ছিলেন এবং নেশা করতেন। আইয়ুব তাঁদের না জানিয়ে ও ভাগ না দিয়ে গোপনে একা একা নেশা করতেন। মূলত এ কারণে তাঁরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরে ছয়জন মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বৌয়াকুড়ে নিয়ে গিয়ে আইয়ুবকে অতিমাত্রায় নেশা করান তাঁরা। এতে আইয়ুব অচেতন হয়ে পড়েন। তারপর নৌকায় করে সদর উপজেলায় মরিচা নামক স্থানে নিয়ে যান। সেখানে শ্বাসরুদ্ধ করে তাঁকে হত্যা করা হয়। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
সিআইডি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইমাম হোসেন এজাহারভুক্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আদালত নয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ছয় আসামির মধ্যে সুজন, সোহাগ, সাদ্দাম ও সমির গ্রেপ্তার হলেও বিমল ও এরশাদকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার আসামিরা উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যান। রায় ঘোষণার সময় আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মো. অলিউল্লাহ্ বলেন, হত্যার অভিযোগে ছয়জনের ফাঁসির আদেশ হয়। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনের প্রত্যেককে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়।