হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ

পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের হাইড্রোপনিক পদ্ধতির তরমুজ বাগান। ২২ নভেম্বর তোলা ছবি l প্রথম আলো
পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের হাইড্রোপনিক পদ্ধতির তরমুজ বাগান। ২২ নভেম্বর তোলা ছবি l প্রথম আলো

মাটিবিহীন বা হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজের আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটি ছাড়াই পাইপে সংরক্ষিত পানিতে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান তরল আকারে প্রয়োগ করে এ পদ্ধতিতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সারা বছর তরমুজ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া শহরে বাড়ির আঙিনায় কিংবা ছাদে যোগ হতে পারে নতুন মাত্রার এ প্রযুক্তি।
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক ঘেঁষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্র। সরেজমিন দেখা যায়, কেন্দ্রের এক কোণে পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের এই বাগান দেখতে ভিড় করছেন লোকজন। প্লাস্টিকের পাইপে ছিদ্র করে ১৪০টি তরমুজের চারা রোপণ করার পর এখন স্বাভাবিক নিয়মে ফলন এসে গাছে ঝুলে বড় হচ্ছে তরমুজ।
খুব আগ্রহ নিয়ে বাগানটি দেখছিলেন এলাকার কৃষক ছোবাহান আকন। তিনি বলেন, ‘বাড়ির আঙিনায় কীভাবে এ রকম একটি তরমুজের বাগান করব, তা দেখছি। এখানকার কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
কেন্দ্রের ল্যাব সহকারী মো. বেল্লাল বলেন, এ বছর আগস্ট মাসে স্থানীয় বাজার থেকে হাইব্রিড তরমুজের বীজ কিনে চারা করা হয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাগানের প্লাস্টিকের পাইপের ছিদ্রে চারা রোপণ করা হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি ফল আসতে থাকে। তিনি বলেন, চারা রোপণের পর প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান, যেমন পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, ইডিটিএ আয়রন, ম্যাংগানিজ সালফেট, বরিক অ্যাসিড, কপার সালফেট, অ্যামোনিয়াম মলিবডেট ও জিংক সালফেট বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে ওই পাইপে নিয়মিত সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়।
মো. বেল্লাল বলেন, তরমুজের জীবনকাল আড়াই মাস। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা তাঁদের এই বাগান থেকে তরমুজ উৎপাদন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হবে। জানুয়ারি মাসে আবার নতুন করে আরও বড় বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে। খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে খরচ একটু বেশি হয়। কারণ, প্লাস্টিকের পাইপ কিনে তা ছিদ্র করে চারা রোপণ করতে হয়। এরপর থেকে খরচ কমে যায়। এই বাগানে তাঁদের ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০০টি তরমুজ বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন ১ কেজি থেকে ২ কেজি হবে। সুস্বাদু এ তরমুজ যদি ১০০ টাকা কেজি হয়, তাহলে ১০০টি তরমুজ কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা দাম হবে। এ ছাড়া এখনো গাছে ৩০টির মতো তরমুজ বড় হচ্ছে।
কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে এর আগে টমেটো, মরিচ, করলা ও মিষ্টি মরিচের আবাদ করে ব্যাপক সাফল্যে আসে। তবে তরমুজে সাফল্য এই প্রথম। এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না, অনাবাদি জমিও চাষের আওতায় আনা যায়। আলাদাভাবে সার ও সেচের প্রয়োজন নেই, মাটিবাহিত কিংবা কৃমিজনিত কোনো রোগ হয় না। তা ছাড়া নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ হয়, বিধায় কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম। ফলে কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না।