আট মাস পর সেই ভবনের কাজ আবার শুরু

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কার্যালয় ও পরীক্ষাগার ভবন নির্মাণকাজ দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে। ঢাকার মিরপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাস্তুরা এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে অবশিষ্ট কাজ করছে।

রডের পরিবর্তে বাঁশ, খোয়ার স্থলে সুরকি ব্যবহারের অভিযোগে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল কর্তৃপক্ষ ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ ঘোষণা করে। ঠিক আট মাস পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফাইটোসেনেটারি সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আলীর উপস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নতুন করে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ বেড়ে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

এ উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছা. কামরুন্নাহার। আরও বক্তব্য দেন দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাস্তুর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শাহীন আখতার, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) এফ এম মহিউদ্দিনসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা কৃষিজাত পণ্যের মান যাচাই ও রোগবালাই পরীক্ষার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফাইটোসেনেটারি সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় সরকারিভাবে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কার্যালয় ও পরীক্ষাগার ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় ঢাকার জয় ইন্টারন্যাশনাল। তদারকির দায়িত্ব পায় ঢাকার শেওড়াপাড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেড। গত বছরের ডিসেম্বরে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুন মাসে হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু ৬ এপ্রিল রডের পরিবর্তে বাঁশ, খোয়ার স্থলে সুরকি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। সে সময় পর্যন্ত ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার কাজ করে।

এদিকে বাঁশ কেলেঙ্কারির ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন এবং তৎকালীন প্রকল্প পরিচালকসহ জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ তদারকি ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক মেরিনা জেবুন্নাহার বাদী হয়ে ১১ এপ্রিল দামুড়হুদা মডেল থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মণি সিং, ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের (ইসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সাত্তার, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ মো. আইয়ুব হোসেন ও প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেনকে আসামি করা হয়।

১৩ এপ্রিল দামুড়হুদা আমলি আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আব্দুল হালিম মামলার তদন্তভার দুদককে দেন। আদেশের পর দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবদুল গাফ্ফার প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করেন। জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মণি সিংকে গ্রেপ্তারও করে দুদক। তবে পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন নেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কুষ্টিয়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবদুল গাফ্ফার সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

 ফাইটোসেনেটারি সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আলী গতকাল প্রথম আলোকে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কালো তালিকাভুক্ত করেছে। মাস্তুরা এন্টারপ্রাইজ নতুন করে কাজ শুরু করেছে। আশা করা যায়, কাজ ভালো হবে।