প্রবাসীসহ তিনজন খুন

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় এক নির্মাণশ্রমিক ও অভয়নগরে মুদি দোকানি এবং ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় দুবাইপ্রবাসী এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়েছে।

চৌগাছা উপজেলায় নিহত নির্মাণশ্রমিকের নাম হোসেন আলী (৪৬)। তাঁর বাড়ি উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কড়াইতলা এলাকার একটি মেহগনি বাগান থেকে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মসিউর রহমান বলেন, হোসেন আলীর মরদেহ হাত-পা ও চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। তাঁর গলায় দাগ রয়েছে। গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এই কারণে তাঁর নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নিহতের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রোস্তমপুর গ্রামের খানকা শরিফে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিল শুনতে যান। রাতে তিনি আর ফেরেননি। গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কড়াইতলা এলাকার আবুল হোসেনের মেহগনি বাগানে তাঁর লাশ পাওয়া গেছে।

এদিকে অভয়নগর উপজেলায় বুইকরা গ্রামে নিহত মুদি দোকানির নাম আবদুর রহমান মোল্লা (৫৬)। গত বুধবার রাতে মাথার পেছনের অংশে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়।

অভয়নগর থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, আবদুর রহমানকে মাথার পেছনের দিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে রহমানের ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

নিহত আবদুর রহমানের ছেলে আল মামুন বলেন, ‘আব্বাকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। আমি থানায় মামলা করেছি।’

পারিবারিক সূত্র জানায়, বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্রামের শ্যামল সিংহের ইটভাটার পাশে অবস্থিত মুদি দোকানটি বন্ধ করে আবদুর রহমান প্রতিবেশী সখিনা বেগমের বাড়িতে যান। সখিনা বেগম এ সময় বাড়িতে ছিলেন না। রাত নয়টার দিকে সখিনা বাড়ি ফিরে উঠানে আবদুর রহমানকে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পিরোজপুর: ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে গত বুধবার দুপুরে আবু সাঈদ খান (৩৫) নামের দুবাইপ্রবাসীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আবু সাঈদ খান একই উপজেলার হদুয়া গ্রামের হাতেম আলী খানের ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই আবু তালেব খান বাদী হয়ে ভাইয়ের স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের (২০) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দুজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় সোনিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে।

নলছিটি থানার ওসি এ কে এম সুলতান মাহামুদ বলেন, আবু সাঈদের গলায় ও বুকের ডান দিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

থানা-পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে আবু সাঈদ খানের সঙ্গে রাজাবাড়িয়া গ্রামের আবদুল হামিদ শিকদারের মেয়ে সোনিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন পর আবু সাঈদ কর্মস্থল দুবাই চলে যান। ১৫ দিন আগে তিনি দেশে আসেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি শ্বশুরবাড়িতে যান। বুধবার সকালে আবু সাঈদের পরিবারের কাছে শ্বশুরবাড়ি থেকে মুঠোফোনে জানানো হয় তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ শ্বশুরবাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

তবে নিহতের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার গত বুধবার গ্রেপ্তারের আগে দাবি করেন, মঙ্গলবার রাতে খাবার খেয়ে আবু সাঈদ ও সোনিয়া আক্তার ঘুমিয়ে পড়েন। রাত তিনটার দিকে সোনিয়ার ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান আবু সাঈদের শরীর শক্ত হয়ে আছে। এরপর পরিবারের লোকজনকে ডাকার পর তারা দেখেন আবু সাঈদ মারা গেছেন।