দেশে প্রথমবারের মতো বৃক্ষ ও বন জরিপ শুরু

সুন্দরবনে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হয়েছে বৃক্ষ ও বন জরিপ-২০১৬ কাযক্রম। এ জরিপের আওতায় সারা দেশের প্রায় ১ হাজার ৮৫৮ স্থানে এ জরিপকাজ চালানো হবে। প্রথম বছরে সুন্দরবন, দেশের উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় এ জরিপকাজ করা হবে। পরের বছর দেশের অন্যান্য স্থানে এ জরিপকাজ চলবে।

আজ শনিবার বিকেলে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রধান অতিথি হিসেবে সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের কাছে পর্যটন জাহাজ ‘এমভি টাঙ্গুয়ার হাওরে’ অনুষ্ঠিত এ জরিপকাজের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, এ জরিপ দেশের সরকারি বন ও গ্রামীণ বনের উন্নয়ন, ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের উদ্যোগকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তার দিকনির্দেশনা দেবে। পাশাপাশি সরকার তথা বন বিভাগ বনের অবক্ষয় রোধ এবং বনবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেখানে বিশেষ অবদান রাখবে।
মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কারণে বনের অবক্ষয়, বন উন্নয়ন ও বন সংরক্ষণের বিভিন্ন পদক্ষেপ মূল্যায়নের জন্য বন জরিপ করা আশু প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, বনজ সম্পদের সুরক্ষা, সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত, বনের আচ্ছাদন বৃদ্ধি এবং বন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এ জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউএসএআইডি এবং সিলভাকার্বন। ২০১৮ সালে এ জরিপকাজ শেষ হবে। এটিই প্রথম পরিপূর্ণ দেশের বনজ সম্পদ জরিপ বা গবেষণা কার্যক্রম। এর আগে ২০০৫ সালে সারা দেশে এ ধরনের জরিপকাজ চালানো হয়। তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ জরিপকাজ ছিল না।
অনুষ্ঠানের আগে সাংবাদিকদের জরিপ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এর সদস্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক নাজমুস সাদাত বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই বনজ সম্পদ জরিপ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বন বিভাগ। এই গবেষণার মাধ্যমে আমাদের প্রকৃত বনজ সম্পদ কতটুকু আছে, সেটা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।’ তিনি আরও বলেন, এই গবেষণায় সারা দেশের গ্রামীণ বনজ সম্পদের পরিমাণও জানা যাবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, এই জরিপ কার্যক্রমের প্রধান তিনটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, বনজ সম্পদ চিহ্নিতকরণ, পাঁচ বছর পরে আবার গবেষণা করে দেখা বনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে এবং এই পরিবর্তনে কী কী প্রভাব কাজ করেছে। এ ছাড়া কার্বন কতটুকু আছে। এই কার্বণ নিঃসরণের জন্য উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা।
এফএওর চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার মেথিউ হেনরি বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বনজ সম্পদ জরিপকাজ সম্পন্ন করা হবে।
বাংলাদেশ বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী বলেন, ‘আমরা সমন্বিতভাবে বনজ সম্পদ জরিপকাজ শুরু করেছি। আজ (শনিবার) সুন্দরবন থেকে এ জরিপকাজ শুরু হচ্ছে। ইউএসএআইডি এ জরিপকাজে অর্থায়ন করছে। এর মাধ্যমে বন ও বৃক্ষ জরিপ করা হবে। জরিপের মাধ্যমে আমাদের কী পরিমাণ বন ও কাঠ আছে, তা জানা যাবে। এ ছাড়া কার্বন নির্ণয় করা গেলে আমরা বলতে পারব, বাংলাদেশে কী পরিমাণ কার্বন মজুত আছে।’ এর আগে, ২০০৫ সালে সারা দেশে এবং ২০০৯-১০ সালে শুধু সুন্দরবনে জরিপ করা হয়েছিল। বর্তমান জরিপকাজের সঙ্গে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাগেরহাট-৩ আসনের সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেক, বিশেষ অতিথি খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ফারুক হোসেন, ইউএসএআইডির প্রতিনিধি, উপপ্রধান বন সংরক্ষক জহির ইকবাল, খুলনার বন সংরক্ষক জহির উদ্দীন আহমেদ।