ছাত্রলীগের মারামারির কারণ 'ফাউ' খাবার

বিজয় দিবস উপলক্ষে এবারও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আয়োজন করা হয় প্রীতিভোজের। সাদ্দাম হোসেন হলে সেই প্রীতিভোজ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হল থেকে খাবারের প্রায় ৮০০ প্যাকেট ‘ফাউ’ নিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’
১৬ ডিসেম্বর সাদ্দাম হোসেন হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হন। ঘটনা সামলাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান।
ছাত্রলীগ ও আবাসিক হলগুলোর বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রীতিভোজের খাবারের প্যাকেট ‘ফাউ’ নেওয়া নিয়েই ওই সংঘর্ষ হয়েছে। সেদিন হলগুলো থেকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা মোট প্রায় ৮০০ প্যাকেট খাবার হল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়েছেন। এই নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাস এবং চারজন সহসভাপতি মিজানুর রহমান, এমদাদুল হক, হাফিজুর রহমান ও বিপ্লব কর্মকার।
বিপ্লব কর্মকার ও হাফিজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করেন। মিজানুর ও এমদাদুল ফোন ধরেননি। সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো আবাসিক হলের প্রভোস্ট এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সবাইকে টাকার বিনিময়ে হল থেকে টোকেন নিয়েই খাবার নিতে বলেছি। কেউ ফ্রি খাবার নিয়েছেন এমন সুস্পষ্ট অভিযোগ এলে আমি সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।’
আবাসিক হল সূত্রে জানা গেছে, বিজয়ের দিনে প্রতিবছর হলগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এ জন্য আবাসিক ছাত্র হলে ৩০ টাকা, অনাবাসিক হলে ৫০ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। সেই টোকেন জমা দিয়ে খাবারের প্যাকেট সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতা-কর্মীরা সাদ্দাম হোসেন হল থেকে ৩০০ প্যাকেট খাবার কোনো টোকেন ছাড়াই নিয়ে যান। এর মধ্যে সভাপতি সাইফুল ও সাধারণ সম্পাদক অমিতের অনুসারীরাই নেন ১০০ প্যাকেট করে। ওই খাবার আগে-পরে নেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে ২৫০ প্যাকেট, জিয়াউর রহমান হল থেকে ৬০ প্যাকেট, লালন শাহ হল থেকে ৪২ প্যাকেট ও শেখ হাসিনা হল থেকে ১৪০ প্যাকেট খাবার ‘ফাউ’ নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৭৮২ প্যাকেট।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মোট নেতা-কর্মীর সংখ্যাই সর্বোচ্চ ২৫০ জন। এর মধ্যে মূল কমিটিতে আছেন ১৩৯ জন। আর দুটি ছাত্র হল ও দুটি ছাত্রী হলে কমিটিতে আছেন ৭০-৮০ জন। নেতা-কর্মীরা প্রীতিভোজের প্যাকেট নিয়ে বহিরাগত ও স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যেও বিলিয়েছেন।