কালীগঞ্জে উচ্ছেদ আতঙ্কে ২১ পরিবার

ঝিনাইদহে গণপূর্তের জমি ঘিরে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে দীর্ঘদিন ওই স্থানে বসবাসরত বিধবা ও অসহায় পরিবারগুলো। উঠে যেতে বলা হয়েছে তাদের। সিমেন্টের পিলার দিয়ে ঘেরা পরিবারগুলোর ঘরের ছবিটি গত শনিবার তোলা l প্রথম আলো
ঝিনাইদহে গণপূর্তের জমি ঘিরে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে দীর্ঘদিন ওই স্থানে বসবাসরত বিধবা ও অসহায় পরিবারগুলো। উঠে যেতে বলা হয়েছে তাদের। সিমেন্টের পিলার দিয়ে ঘেরা পরিবারগুলোর ঘরের ছবিটি গত শনিবার তোলা l প্রথম আলো

স্বামীর মৃত্যুর পর আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন গুলনাহার বেগম। তিন সন্তান নিয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামে। বাবার বাড়িতেও থাকার জায়গা হয়নি তাঁর। শেষে গ্রামটির একপাশে গণপূর্ত বিভাগের পতিত জায়গা পরিষ্কার করে টিনের চালা তৈরি করে বসবাস শুরু করেন গুলনাহার।
গুলনাহার বেগম ৩৫ বছর ধরে সেখানেই বাস করছেন। তাঁর এক ছেলেও সস্ত্রীক সেখানে রয়েছেন। গুলনাহারের মতো আরও সাতজন বৃদ্ধা ওই জমিতে টিনের চালা তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে তাঁদের সন্তানেরা মিলিয়ে মোট ২১টি পরিবার বাস করছে। সম্প্রতি গণপূর্ত বিভাগ ওই জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবারগুলোকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে কংক্রিটের খুঁটি স্থাপন করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশ্রয় হারানোর শঙ্কা নিয়ে দিনাতিপাত করছে অসহায় পরিবারগুলো। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আগে তাঁদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হোক। উচ্ছেদ করলে তাঁদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
গণপূর্ণ বিভাগ ঝিনাইদহ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেজপাড়া মৌজায় গণপূর্ত বিভাগের ৬ একর ৯০ শতক জমি রয়েছে। ১৯৫২ সালে সেখানে ইট তৈরির জন্য ভাটা নির্মাণ করা হয়। সেই সময়ে এলাকায় কিছু ভবন নির্মাণের জন্য ইটের প্রয়োজন হয়। ইট তৈরির কাজ শেষে জমিটি পতিত হয়ে যায়।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই জমিতে কয়েকটি পরিবার ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। কিছু জায়গায় কলা ও কচুর চাষ হচ্ছে। আরও কিছু জায়গা খালি পড়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সরকার গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ওই জমি অধিগ্রহণ করেছিল। তখন বেজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক আনিচুর রহমানের পরিবারের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অধিগ্রহণের সময় বলা হয়েছিল চার-পাঁচ বছর পর মালিকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মালিকেরা জমি ফেরত পাননি। পরিত্যক্ত অবস্থায় ওই জমি দীর্ঘদিন পড়ে ছিল। গ্রামের মানুষ জমির কিছু অংশ সম্মিলিতভাবে চাষ করে ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাকি জমিতে কিছু অসহায় মানুষ বসবাস শুরু করেন। তাঁদের জায়গা নেই। পুনর্বাসন না করে তাঁদের উচ্ছেদ করা ঠিক হবে না।
ওই জমিতে প্রায় তিন দশক ধরে বাস করছেন নূরজাহান বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর সেখানে ঝোঁপঝাড় সাফ করে ঘর তৈরি করেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে তাঁর। একই অবস্থা বিধবা রহিমা খাতুনের। তিনি বলেন, ‘নিজেদের যাওয়ার জায়গা থাকলে সরকারি জায়গায় পড়ে থাকতাম না।’ আরেক বৃদ্ধা বেবি খাতুন বলেন, ‘জায়গাটি সরকারি। সরকারের প্রয়োজনে নিয়ে নিতেই পারে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়াই শুধু তাঁদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।’
জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আল-আমিন বলেন, ‘গণপূর্তের জমি দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের ওই জায়গা থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে। সেখানে একটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’