পর্যাপ্ত লোকবল ছাড়াই চলছে ক্লিনিক-রোগনির্ণয়কেন্দ্রগুলো

ঢাকার দোহার উপজেলায় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের বাস। উপজেলায় বেসরকারি ক্লিনিকের সংখ্যা ১১টি। রোগনির্ণয়কেন্দ্র আছে নয়টি। বেশির ভাগই পৌরসভা ও এর আশপাশে অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত নিজস্ব জনবল নেই, সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয়কেন্দ্র চালানোর জন্য শর্ত পূরণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। শয্যার অনুপাতে নিজস্ব চিকিৎসকসহ লোকবল, ভবনের আয়তন, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অস্ত্রোপচারকক্ষ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সুনির্দিষ্ট শর্ত আছে। লাইসেন্স প্রদান কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগনির্ণয়কেন্দ্রের ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি, অনুমোদিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওষুধ ও নিজস্ব পরীক্ষাগার থাকতে হবে।
নয়টি রোগনির্ণয়কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি বিভিন্ন ক্লিনিকের অন্তর্ভুক্ত। অন্য চারটি পৃথকভাবে চলছে। পৌরসভার আশপাশে ক্লিনিক আছে ছয়টি। অন্তত সাতটি বেসরকারি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, এগুলোতে নিজস্ব চিকিৎসক নেই। ঢাকার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল। একটি ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই। মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের ক্লিনিকটি নিবন্ধন ছাড়া এক বছর ধরে চলছে।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার কথা জানিয়ে মুক্তি ক্লিনিকের নির্বাহী পরিচালক ফয়েজ আল মামুন বলেন, ‘অনুমতি তো পাবই। এখানে ঢাকার ভালো ভালো ডাক্তার আসেন। যার কারণে আমরা হাসপাতাল চালাচ্ছি।’
ঢাকার সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা বলেন, অনুমোদন ছাড়া কোনো বেসরকারি ক্লিনিক চলার কথা না। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
তিনটি রোগনির্ণয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। দেয়ালে বিভিন্ন পরীক্ষার মূল্যতালিকা টাঙানো। একাধিক রোগীর রসিদে এর চেয়ে বেশি দাম নিতে দেখা যায়। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারের উপজেলা হাসপাতালের গা ঘেঁষে কোনো বেসরকারি ক্লিনিক হতে পারবে না। অথচ দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশেই রয়েছে তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলো হলো জয়পাড়া ডায়াগনস্টিক, জনসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এবং মুক্তি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক। সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু লোক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিন বছর ধরে দোহার উপজেলা হাসপাতালটির অস্ত্রোপচারকক্ষ বন্ধ। অবেদনবিদ নেই আড়াই বছর। নেই চোখের ও স্ত্রীরোগের চিকিৎসক (গাইনি)। যে কজন চিকিৎসক আছেন, তাঁদের বেশির ভাগ ঢাকা থেকে যাতায়াত করেন।
কয়েক দিন এসব ক্লিনিকে ঘুরে প্রায় সবগুলোতেই উপজেলার সরকারি চিকিৎসকদের দেখা গেছে। বেসরকারি দোহার জেনারেল হাসপাতালে টাঙানো চিকিৎসকের নামের তালিকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তত তিনজন ডাক্তারের নাম আছে। লেখা আছে এঁরা সপ্তাহে তিন দিন বেলা একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সেখানে বসেন। আবার জয়পাড়া ক্লিনিকের তালিকা বলছে, এঁরাই সেখানে আরও তিন দিন বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বসেন।
এঁদের একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, ‘নিজের দায়িত্ব পালন করেই বেসরকারি ক্লিনিকে বসি।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জসিমউদ্দিন বলেন, ‘আমার সহকর্মীদের হাসপাতাল চলাকালীন নিজস্ব চেম্বারে কিংবা বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে নিষেধ করি। যাঁরা কথা শোনেন না, তাঁদের বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।’
এদিকে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশটির (সংশোধনী ১৯৮৪) পর বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয়কেন্দ্রগুলো পরিচালনাসংক্রান্ত নতুন কোনো আইন হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) এ কে এম সাইদুর রহমান বলছেন, যুগোপযোগী আইন ও বিধি দরকার। অধ্যাদেশে দেওয়া বিভিন্ন সেবামূল্য ও জরিমানার অঙ্ক হালনাগাদ করা হয়নি।