আইন ভেঙে ছাড়পত্র

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ ছাড়পত্র কমিটির ৩৩১তম সভায় সানমেরিন লিমিটেডকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনটি আইন ভঙ্গ করে সুন্দরবনের পাশে শিপইয়ার্ড স্থাপনের জন্য অবস্থানগত ছাড়পত্র দেওয়ার পেছনে হানিফের চাপ ও প্রভাব ভূমিকা রেখেছিল বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জাহাজ নির্মাণ ইয়ার্ডটি যে সুন্দরবনের ২০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত, তা-ও ওই সভার কার্যবিবরণী ও ছাড়পত্রের অনুমতিপত্রে উল্লেখ নেই। পরিবেশ আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ছাড়া কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এই তিনটি আইনই অনুমোদন করা হয়েছে আওয়ামী লীগের আগের ও বর্তমান আমলে। পরিবেশ আইন, ১৯৯৯ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন, ২০১২-তে সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে সুন্দরবন প্রভাবিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসিএ হিসেবে চিহ্নিত ওই ১০ কিলোমিটারকে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের বিচরণের জন্য সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে আইনে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে জলাভূমি ভরাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুন্দরবন রক্ষার অংশ হিসেবে ওই এলাকায় সব ধরনের শিল্পকারখানা ও অবকাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জয়মনির পার্শ্ববর্তী পশুর নদীকে ২০১২ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ডলফিনের অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ীও জয়মনিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান তো দূরে থাক, চাষাবাদ পর্যন্ত নিষিদ্ধ।
জাতিসংঘের কনভেনশন অব বায়োডায়ভারসিটি (সিবিডি) ও রামসার কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী দেশ। ওই দুই কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করবে এবং এর চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় শিল্প ও অবকাঠামো নির্মিত হতে দেবে না। সুন্দরবনকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ঘোষণাতেও সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশ তো বটেই, জাতিসংঘও অঙ্গীকারবদ্ধ।