'প্রতিবেদন সুষ্ঠু ও সঠিক হবে'

দিয়াজ ইরফান চৌধুরী
দিয়াজ ইরফান চৌধুরী

ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ তাঁর বাসার যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তা পরিদর্শন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রতিনিধিদল। লাশ উদ্ধারের কক্ষসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ আলামতের ছবি তোলে তারা। ওই কক্ষের খাট থেকে সিলিং ফ্যানের দূরত্বও মাপে প্রতিনিধিদলটি। তিন সদস্যের এই দল দিয়াজের মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করে।
গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকায় দিয়াজের বাসায় যায় প্রতিনিধিদলটি। দলের নেতৃত্ব দেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দিয়াজ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার মো. অহিদুর রহমান। প্রতিনিধিদলটি দিয়াজের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির কাজে যুক্ত থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে।
পরে সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। এ জন্যই চট্টগ্রামে এসেছি। লাশ উদ্ধারের স্থান পরিদর্শন করেছি। আশপাশের পারিপার্শ্বিক আবস্থার ছবি তুলেছি। সাক্ষীদের সঙ্গে, প্রথম ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুনঃ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এ প্রতিবেদন সুষ্ঠু ও সঠিক হবে।’
ময়নাতদন্ত দল দিয়াজের বাসায় গেলে বিশ্ববিদ্যায়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় ছাত্রলীগের একপক্ষের নেতা-কর্মীরা এই ‘হত্যার’ বিচার চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা মামলার আসামি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এ সময় আলমগীর টিপুর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।
গত ২০ নভেম্বর রাতে নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাওয়ার আগে দিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
প্রথম ময়নাতদন্তে বলা হয়, দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন। এরপর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ তুলে গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজে মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। সেদিন মরদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা প্রাথমিকভাবে জানান ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা।
দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলের খুনিরা অনেক শক্তিশালী। যদি দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে সঠিক প্রতিবেদন না আসে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইব।’
এদিকে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে যায় ঢাকা থেকে আসা প্রতিনিধিদলটি। এ সময় মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে দিয়াজের অনুসারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেন। তখন কিছু যুবক তাঁদের ধাওয়া দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেন।
এ বিষয়ে দিয়াজের অনুসারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. মামুন অভিযোগ করেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
তবে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর ছাত্রদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
রব হলে দিয়াজের অনুসারীদের কক্ষে লুটপাটের অভিযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হলে গতকাল রোববার বিকেলে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর অনুসারীদের কক্ষে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিয়াজ হত্যার বিচার চেয়ে দুপুরে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির কুশপুতুল পোড়ানোকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
দিয়াজের অনুসারী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দিয়াজ হত্যার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়েছিলাম। এ সুযোগে সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারী নেতা-কর্মীরা আমাদের ৪২টি কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। তাঁরা দুটি ল্যাপটপ ও কয়েক হাজার টাকা নিয়ে যান। দিয়াজ হত্যার সঠিক ময়নাতদন্ত আসবে—এ আশঙ্কায় তাঁরা কক্ষগুলোতে ভাঙচুর চালান।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, এ ধরনের কিছুই ঘটেনি।
শহীদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এ কে এম মাঈনুল হক নিয়াজী বলেন, ‘কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। কে বা কারা করেছে জানি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নিয়াজ মোরশেদ বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।