কসাইটুলির শতবর্ষী 'চিনির টুকরা মসজিদ'

মসজিদের ভেতরের কারুকাজ l প্রথম আলো
মসজিদের ভেতরের কারুকাজ l প্রথম আলো

বংশাল রোডের গলি-ঘুপচির ভেতর দিয়ে কসাইটুলি যাওয়ার পথে আচমকা ভোজবাজির মতো সামনে উদয় হলো মসজিদটি। দেয়ালে চিনামাটির রঙিন কারুকাজ দুপুরের রোদে চিকচিক করছে। ধূলিধূসরিত সরু গলিটার সঙ্গে ঝলমলে মসজিদ খানিকটা বেমানান লাগে।

পুরান ঢাকার কসাইটুলির কে পি ঘোষ রোডে মসজিদটির অবস্থান। সামনের অংশে লেখা আছে ‘কাস্বাবটুলি জামে মসজিদ’। তবে এলাকাবাসীর মুখে মুখে নাম হয়ে গেছে ‘চিনির টুকরা মসজিদ’। চিনির টুকরা মসজিদ নাম হলো কেন? কসাইটুলির বাসিন্দা খায়রুদ্দিন স্বপন বললেন, মসজিদের গায়ে চিনামাটির সাদা টুকরাগুলো দেখতে চিনির দানার মতো। স্থানীয় বাসিন্দারা তাই এ নামেই মসজিদটিকে ডাকে, চেনে।

হিজরি ১৩৩৮ সনে তৈরি মসজিদটির বয়স গত বছর ১০০ পেরিয়েছে। এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ঢাকা কোষ থেকে জানা যায়, জনৈক ব্যবসায়ী আবদুল বারি এটি তৈরি করেন। আয়তকার কাস্বাবটুলি জামে মসজিদের ছাদে তিনটি গম্বুজ। চার কোনায় চারটি বুরুজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। গম্বুজ আর বুরুজগুলোর মাথায় পদ্মফুলের নকশা করা তির। ছাদের চারদিক ঘিরে আছে অনেকগুলো টারেট, যা মসজিদের নকশাকে আরও জমকালো করে তুলেছে।

কসাইটুলির শতবর্ষী কাস্বাবটুলি জামে মসজিদ l প্রথম আলো
কসাইটুলির শতবর্ষী কাস্বাবটুলি জামে মসজিদ l প্রথম আলো

তবে মসজিদটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো ‘চিনিটিকরির কারুকাজ’। ভেতর-বাইরের দেয়ালে চিনিটিকরি পদ্ধতির মোজাইকে নকশা করা। চিনামাটির ভাঙা টুকরা আর রঙিন কাচ দিয়ে গোলাপের ঝাড়, আঙুরের থোকা, ফুলদানির ছবি ফুটে উঠেছে মসজিদের দেয়ালে-খিলানে। ভেতরের মিহরাব (কিবলামুখী কুলুঙ্গি) ও এর আশপাশের নকশা সবচেয়ে রঙিন ও জমকালো।

একতলা মূল মসজিদটি প্রায় দুই কাঠা জমির ওপর দাঁড়িয়ে। পরে পেছনে তিনতলা পর্যন্ত এর সম্প্রসারণ হয়েছে। মসজিদ কমিটির সদস্য মো. জাকির বলেন, পুরোনো মসজিদে মুসল্লিদের স্থানসংকুলান না হওয়ায় ধাপে ধাপে এর আকার বাড়ানো হয়েছে। তবে মূল মসজিদের কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এখন প্রায় বারো শ মুসল্লি একসঙ্গে এখানে নামাজ পড়তে পারেন।

শতবর্ষী মসজিদের দেয়ালের কিছু অংশে মোজাইক উঠে গিয়ে ভেতরের লাল ইট উঁকি দিচ্ছে। কোথাও কোথাও ফিকে হয়ে গেছে কাচের নীল-সবুজ রং। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মো. নুরুদ্দিনের কথায়, মসজিদের আর আগের জৌলুশ নেই। শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘তখন এই মসজিদ আরও ঝকঝক করত। এখন আর তেমন নাই।’

কসাইটুলি পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটি মিলে এ মসজিদের দেখভাল করে। কমিটির সদস্য মো. জাকির জানালেন, এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত খরচে সাত-আট বছর আগে ভেতরের অংশের সংস্কার করা হয়েছে। তবে বাইরের অংশের সংস্কার সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘বিটিভির আজানে এই মসজিদ দেহায়। মসজিদ দেখতে কত বিদেশিরা আহে। সরকার যদি সাহায্য করে, এই ঐতিহ্য তাইলে টিকব। পুরা মসজিদ সংস্কারের পয়সা তো পঞ্চায়েতের নাই।’