গ্রেপ্তার ৬৩, ছাড়িয়ে নিতে তদবির

সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধের সময় বগুড়ার শাজাহানপুরে গাড়ি ভাঙচুর আর আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরের কাউকেই এত দিন ধরা হয়নি। আবার গতকাল রোববার যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৬৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করলেও তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে শুরু হয় তদবিরের হিড়িক।

অবরোধ কর্মসূচির অন্যান্য দিনের মতো শনিবার রাতেও ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের শাজাহানপুর এলাকায় তিনটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়। এরপর যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে আছেন জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলেজশিক্ষক ও চিকিৎসক। তাঁদের শহরের জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়ার পর ছাড়িয়ে নিতে শুরু হয় নানা মহলের তদবির। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাসহ নানা মহল থেকে জেলা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের কর্মকর্তাদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলা হয়। তবে তাঁরা বগুড়ায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন সহিংসতায় দায়ের করা মামলার আসামি হওয়ায় পুলিশ সবাইকে আদালতে পাঠায়। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ সোমবার শাজাহানপুরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দল।

শাজাহানপুর থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ের পর গত ৩ মার্চ শাজাহানপুর থানায় হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে জামায়াত-শিবির। পুলিশ বাধা দিলে সহিংসতায় চারজন মারা যান। ওই ঘটনার পর থেকে কয়েক দফার অবরোধ ও হরতালে নিয়মিতই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা শাজাহানপুরে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বা পুড়িয়েছেন। এমনকি স্থানীয় ফটকি সেতুতে হামলা চালিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এত ঘটনার পরও এত দিন ওই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।

গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার রাতে আগুন দেওয়া ট্রাকগুলো ভস্মীভূত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। একটি ট্রাকের চালক কক্সবাজারের কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শাজাহানপুরে আসার পর ২০ থেকে ২৫ জন হামলাকারী হকিস্টিক ও রামদা হাতে গাড়িবহরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুরের পর ককটেল ও পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গ্রেপ্তার ৬৩ জনের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল লতিফ, মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের জামায়াত-সমর্থিত চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, আড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি রেজাউল করিম, জামায়াতের নেতা মনজুর কাদির, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জহরুল হক, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর মোহামঞ্চদ, আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুবেল হাসান ও চুপিনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ রহমান।

জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৮ দলের সমাবেশ চলার সময় যৌথ বাহিনী ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালিয়েছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, আটক হওয়া ব্যক্তিরা বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তারা সবাই বিভিন্ন মামলার আসামি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’