নির্বিচারে গাছ হত্যার সাক্ষ্য দিচ্ছে কালো গুঁড়িগুলো

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন সড়কের পাশের অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা হয়। ছবিটি লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের বাগবাড়ি এলাকা থেকে গত ১৬ ডিসেম্বর তোলা ছবি: প্রথম আলো
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন সড়কের পাশের অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা হয়। ছবিটি লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের বাগবাড়ি এলাকা থেকে গত ১৬ ডিসেম্বর তোলা ছবি: প্রথম আলো

লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে আসার সব সড়কের পাশে পড়ে আছে বড় বড় অনেক কাটা গাছ। আঞ্চলিক সড়ক, গ্রামের ভেতরের পাকা সড়কগুলোর পাশেও একই দৃশ্য। এসব গাছ নিধন হয়েছে সড়ক অবরোধের জন্য। বন বিভাগের সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি ও চলতি ডিসেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিধন হয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাছ। এসব গাছ লাগানো হয়েছিল সড়কের পাশে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে রায়পুর হয়ে লক্ষ্মীপুর শহরে যেতে চোখে পড়ে সড়কের দুই পাশের কাটা গাছের গুঁড়িগুলো কালো হয়ে আছে। সাক্ষী হয়ে আছে নির্বিচার গাছ হত্যার। এখানে-সেখানে পড়ে আছে বিভিন্ন আকারের কাটা গাছ। কড়ই, রেইনট্রি, আকাশমণি, মেহগনি আরও কত নামের গাছ। এর মধ্যে আছে পুরোনো ও বয়সী মহীরুহও। ১২ ডিসেম্বর সেগুলো কেটে সড়কে ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসন ডালপালা কেটে গাছগুলো সরিয়ে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে।

গাছ হত্যার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে লক্ষ্মীপুর-রামগতি, কচুয়া-বটতলী, পোদ্দার বাজার এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের দুপাশেও। কয়েকটি স্থানে সড়ক কেটে গর্ত করা হয়েছিল। সেগুলো সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় লোকজন ইতিমধ্যে মেরামত করেছে।

বন বিভাগের সূত্র জানায়, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এসব গাছ লাগানো হয়েছিল। এগুলো দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় উপকারভোগীরা এখন এই কাটা গাছগুলো ভোগদখল করবেন। গত ফেব্রুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের পর সহিংসতার সময় জেলার বিভিন্ন সড়কের পাশের অসংখ্য গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল।

এরপর ১২ ডিসেম্বর জেলা যুবদলের নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েলের লাশ গুমের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় প্রচুর গাছ কেটে সড়কে ফেলে রেখে অবরোধ করা হয়। ওই দিন রাতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর থেকে পরবর্তী দুই দিনেও অসংখ্য গাছ কাটা হয়।

লক্ষ্মীপুর সদর নার্সারি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ভূপাল চন্দ্র দেবনাথ গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ফেব্রুয়ারি ও ডিসেম্বরের সহিংসতায় সব মিলিয়ে জেলার বিভিন্ন সড়কের দুপাশের কয়েক প্রজাতির এক হাজার ৫৬৯টি বড় গাছ এবং প্রায় দুই হাজার ছোট গাছ কাটা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৯টি মামলা করেছে বন বিভাগ। কেটে ফেলা গাছগুলো স্থানীয় উপকারভোগীদের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনেক সড়কের ওপর পড়ে থাকা গাছ সরাতে গেলে তাঁদের লোকজনকে বাধা দেওয়া হয়েছে।

আতঙ্কে কর্মকর্তারা: ১২ ডিসেম্বর বন বিভাগের কার্যালয়ে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখে-মুখে আতঙ্ক। একই দিন ভাঙচুর করা হয় জেলা পরিষদ ভবন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং পরদিন বিকেলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ভাঙচুর হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, তাঁর সামনেই কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। এর পর থেকে তিনি আতঙ্কে আছেন।
কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক ওসমান খান বলেন, ১২ ডিসেম্বর রাতে তাঁর কার্যালয়ে ভাঙচুরের সময় তিনি অন্য কক্ষে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। ওই ঘটনার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্ক ভুগছেন।