নিয়ম লঙ্ঘন করে সাত হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে স্থাপনা!

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে বাড়ি ও স্থাপনা বানানো হয়েছে। এতে প্রকল্প এলাকায় আবাদি জমি কমে গিয়ে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

মেঘনা-ধনাগোদা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আতাউর রহমান বলেন, কৃষিজমি সুরক্ষায় আইন না থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে। বাসস্থান-সংকট মেটাতে অনেকে বাড়ি বানাচ্ছেন। শখের বশেও বানাচ্ছেন কেউ কেউ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চাঁদপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) যৌথ উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে মতলব উত্তর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার ৫৮৪ হেক্টর এলাকা মেঘনা-ধনাগোদা সেচপ্রকল্পের বাঁধের আওতায় নেওয়া হয়। সে সময় প্রকল্পে কৃষিজমি ছিল ১৫ হাজার ৪৬৪ হেক্টর। চলতি মৌসুমে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে প্রকল্পের আওতায় সেচ দেওয়া সম্ভব হয়েছে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। গত ২৮ বছরে প্রকল্পে ৬ হাজার ৯৬৪ হেক্টর কৃষিজমি কমেছে। সেখানে লোকজন বাড়ি, দোকানপাট, বিপণিবিতান, রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন। অথচ অনুমতি না নিয়েই কৃষিজমিতে বাড়ি-স্থাপনা বানানো হচ্ছে। এসব বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পে যে হারে ফসলি জমি কমছে, তা উদ্বেগের বিষয়। এভাবে জমি কমতে থাকলে দেশে খাদ্য-সংকট দেখা দেবে।

উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রকল্পে ২০১৩ সালে উৎপাদিত ধানের পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন। ২০১৪ সালে ৫০ হাজার ১০০, ২০১৫ সালে ৫০ হাজার এবং এ বছর তা কমে ৪৬ হাজার ৩৯২ মেট্রিক টনে পৌঁছায়।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের ফতেপুর, লুধুয়া, গজরা, ছৈয়ালকান্দি, মান্দারতলী, নবুরকান্দি, ঘনিয়ারপাড়, আমিরাবাদ, রাঢ়িকান্দি, ঠেটালিয়া ও ছেংগারচর এলাকায় কৃষিজমিতে অন্তত দুই শতাধিক বাড়ি বানানো হয়েছে। আশপাশের আবাদি জমিতে রাস্তা, দোকানপাট ও স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছে।

ফতেপুর গ্রামের মনির হোসেন মিজি বলেন, ‘পরিবারের লোক বাইড়া গেছে। বাপ-দাদার ভিটায় অনে থাওনের জাগা অয় না। এলিগা নিজেগো জমিতে নতুন বাড়ি কইরা আরামে থাকতাছি।’

নবুরকান্দি গ্রামের এক চাষি বলেন, ‘শখে বাড়ি বানাইছি। নিজের জমিতে বাড়ি বানাইছি। এতে কার কী? প্রশাসনের অনুমতির কী দরকার!’

সিপাইকান্দি-ঠেটালিয়া-ফতেপুর এলাকার পানি ব্যবস্থাপনা দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী খোকন বলেন, ‘আবাদি জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ি ও স্থাপনা হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। অন্যথায় এটি গৃহায়ণ প্রকল্পে রূপ নেবে। বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।’