কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের উদ্বোধন আজ

শিবচরের কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট থেকে প্রায় এক শ গজ দূরে সড়কের প্রায় মাঝখানে থেমে আছে আট-দশটি বাস-ট্রাক। তবে মুখ ঘাটের দিকে নয়, উল্টো দিকে ঘোরানো। অন্য সময় হলে পুলিশ ও ঘাটকর্মীদের তোপের মুখে চালকেরা টিকতে পারতেন না। কিন্তু এখন কে দেখবে তা? বলতে গেলে, ঘাটে তো পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় এখন যানবাহনই নেই!

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে এ দৃশ্য। ওই যানবাহনগুলোর মতো কাওড়াকান্দি ঘাটের নুরজাহান হোটেলের ব্যবসাও এখন উল্টোমুখী। হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম আগে প্রতিদিন ছয়-সাত হাজার টাকা কামাই করতেন। কয়েক দিন ধরে হাজার তিনেক টাকারও বিক্রি হচ্ছে না। এ তথ্য দিয়েছেন হোটেলের কর্মচারী মশিউর মৃধা।

মশিউরের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সেখান থেকে সাত বছর আগে এ ঘাটে এসে জীবিকার সন্ধান পেয়েছিলেন। আজ রোববার কাওড়াকান্দি থেকে ঘাট সরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে কাঁঠালবাড়ীতে চলে যাবে। এর আগেই মশিউরকে নতুন কাজের সন্ধানে বেরোতে হবে।

হোটেলের আরেক কর্মী সুমন শেখ বলেন, বেশ কদিন ধরে মালিক রফিকুল ঠিকমতো হোটেলে আসেন না। এলেও আগের মতো প্রাণখুলে কথা বলেন না। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় উদ্‌ভ্রান্তের মতো পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ঘাটের দোকানপাট, বাস টার্মিনাল, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, স্পিডবোট ঘাট কোথাও প্রাণচাঞ্চল্য নেই। ক্রেতা বা গ্রাহক তেমন না থাকায় কেউ হাত গুটিয়ে বসে আছেন। খোশগল্প করছেন।

বাস টার্মিনালের বিআরটিসি কাউন্টারে একজন কর্মী অনেকটা অলস বসে ছিলেন। ঘাট সরানোর প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, এ ঘাটে ভাঙনের তীব্রতা নেই। এরপরও কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেন ঘাট সরানো হচ্ছে?

নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আজ সকালে কাঁঠালবাড়ী ঘাট উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঘাট এলাকা সাজাতে দেখা যায়।

সড়ক দুটি পাশের শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবায় বঙ্গবন্ধু গোলচত্বরে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে গিয়ে ঠেকেছে। নাওডোবা থেকে শিবচরের পাচ্চর পর্যন্ত সাড়ে নয় কিলোমিটার সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য সম্প্রতি উদ্বোধন করে গেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

কমবে দূরত্ব, বাঁচবে সময়

কাঁঠালবাড়ীর নতুন এ ফেরিঘাট স্থানীয়ভাবে শরীয়তপুর ঘাট নামে পরিচিত। এখান থেকে ফেরিসহ অন্যান্য নৌযান যাবে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট। শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দির দূরত্ব সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। নতুন পথ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ীর দূরত্ব কমবে পাঁচ কিলোমিটার। ফলে এ পথে প্রায় ৪০ মিনিট সময় কম লাগবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রকৌশল বিভাগের সদরঘাট কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, কাঁঠালবাড়ী ঘাট চালু হওয়ায় মানুষ ঘাটের দুঃসহ যানজটের কবল থেকে মুক্তি পাবে। বিআইডব্লিউটিএ এই নতুন ঘাট স্থাপনের কাজ গত জুলাইয়ে শুরু করে। কাঁঠালবাড়ী ও নাওডোবায় ২৪ একর জায়গায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি যাত্রী ছাউনি, তিনটি পার্কিং ইয়ার্ড, চারটি ফেরিঘাট, তিনটি লঞ্চঘাট, একটি স্পিডবোট ঘাট ও পুলিশ ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে।