ডিগ্রি নেই তবু গাইনি বিশেষজ্ঞ

.
.

ঢাকার সাভারের গেন্ডা এলাকার মনামী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অনিয়মিত চিকিৎসক শামসুন্নাহারের গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যার ওপর কোনো ডিগ্রি নেই। এরপরও তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়ে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারসহ সেবা দিয়ে আসছিলেন।

গত সোমবার মনামী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অস্ত্রোপচারের পর নয়নতারা নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর পর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শামসুন্নাহার তাঁর অস্ত্রোপচার করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, রক্তনালি কেটে ফেলায় নয়নতারার মৃত্যু হয়। পরে তাঁর লাশ অস্ত্রোপচারের টেবিলে রেখেই শামসুন্নাহার পালিয়ে যান।

মনামী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে সাইনবোর্ডে চিকিৎসক শামসুন্নাহারের পরিচয় লেখা রয়েছে ‘গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ’। ওই সাইনবোর্ডে তাঁকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার (গাইনি) ছাড়াও তাঁর স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ট্রেনিং (পিজিটি) থাকার উল্লেখ রয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁর এসব পরিচয় ভুয়া বলে দাবি করেছেন।

গতকাল জানতে চাইলে শামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সাভার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ২০০৮ সালে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর গণস্বাস্থ্য ও এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েক বছর চাকরি করেছেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ক্লিনিকে অনিয়মিত চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক শামসুন্নাহার বলেন, গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যায় তাঁর কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তিনি এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি অস্ত্রোপচার করে আসছেন।

        মনামী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাইনবোর্ডে তাঁকে গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার (গাইনি) হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মালিকপক্ষ এটা ভুল করেছে। এতে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না।’ এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের সময়ে প্রসূতির রক্তনালি কেটে ফেলার অভি​েযাগ তিনি অস্বীকার করেন।

জানতে চাইলে এনাম মেডিকেলের পরিচালক আনোয়ারুল কাদির বলেন, তাঁদের হাসপাতালে শামসুন্নাহার নামে গাইনির কোনো চিকিৎসক বা সহকারী রেজিস্ট্রার নেই। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, শামসুন্নাহারের গাইনির কোনো ডিগ্রি নেই। তাঁর অস্ত্রোপচারেরও কোনো যোগ্যতা নেই। প্রসূতি নয়নতারার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গত সোমবারই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ জয়নব আক্তারকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত অব্যাহত আছে।

সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অস্ত্রোপচারের সময় শামসুন্নাহার প্রসূতি নয়নতারার একটি রক্তনালি কেটে ফেলেন। অধিক তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।